পেট্রোবোমায় দাম বেড়েছে মাংসের
ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অব্যাহত অবরোধ-হরতালে জিম্মি হয়ে পড়েছে নগরবাসী। পেট্রোলবোমায় অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে পুড়ছে মালবাহী ট্রাক। আগে হরতাল-অবরোধে বোমা-ককটেল ব্যবহার হতো বলে পরিবহনের বড় ধরনের ক্ষতি হতো না। কিন্তু এখন পেট্রোলবোমা ব্যবহারের ফলে পরিবহনের ক্ষতি বেড়েছে। এতে করে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে বেশি। চলমান এ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাংসের চাহিদা কমলেও পরিবহন খাতের অচলাবস্থার কারণে দাম বেড়েছে।
টানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে নগরীর বেশিরভাগ কমিউনিটি সেন্টারের। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকায় মাংসের চাহিদা কয়েকগুন কমেছে। তবে কমেনি এর দাম। বরং বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
দাম বাড়ার পেছনে পণ্যবাহী পরিবহনে নাশকতাকে দায়ী করছেন এ খাতের ব্যবসায়িরা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা হরতাল-অবরোধের নামে জনগণকে জিম্মি করে মাছ-মাংসসহ তেল, ডাল, মসলার দাম বৃদ্ধি করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কমলাপুর, শাপলা চত্বর, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, শান্তিনগর, পুরাণ ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দেড় মাস আগে যে গরুর মাংস ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, বর্তমানে তা ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০০ টাকার খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা সবুজ পেশায় ইন্স্যুরেন্স কর্মী। নয়াবাজার এলাকার হাজী গোস্ত বিতানে তাকে দেখা গেছে অনেকটা উত্তেজিত বাক্য বিনিময় হকরতে। নিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর কারণ জানতে চাইলে সবুজ বলেন, ‘সপ্তাহের ছুটির দিনে গরুর মাংস কিনতে এসেছি। ২৫০ গ্রাম হাড়সহ প্রতিকেজি মাংসের দাম চাইছে ৩৫০ টাকা। এর কমে দেবেই না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মাস আগেই মাংস কিনেছি ২৮০ টাকা, আর হাড় ছাড়া ৩০০ টাকায়। মাসের ব্যবধানে এখন বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।’
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দোকানি সঠিক কোনো উত্তর দিতে না পারলেও, সহজভাবে জানিয়ে দিয়েছেন হরতাল-অবরোধের কারণে দাম বেড়েছে। একই উত্তর দিয়েছেন প্রায় সবকটি বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে সেগুনবাগিচার মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স কাঁচা বাজারের গোশত বিক্রেতা নূর ইসলাম নিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘দাম বেড়েছে এটা সত্য। এতে আমাদের কিছু করার নাই। সরকারের তদারকি থাকায় অযৌক্তিক দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। দেড় মাস আগে একই মাংস হাড়সহ ২৮০ টাকা এবং হাড় ছাড়া ৩২০ টাকায় কেজি বিক্রি করেছি। তখন গরুর আমাদনি ছিল স্বাভাবিক। দেশে চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গরু আসলেও তা ঢাকায় আসতে পারছে না পেট্রল বোমার ভয়ে। যে কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে। সে জন্য ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে বেশি দামে গুরু কিনতে হচ্ছে। এ জন্য মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
সিটি কর্পোরেশনের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে নূর ইসলাম বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন রমজানে আমাদের যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সেই দামেই বিক্রি করে থাকি। কিন্তু রোজার পরেই আসে কোরবানি। ঘরে ঘরে মাংস থাকায় এর প্রভাব পড়ে আমাদের ওপর। মোট কথা ঈদ মৌসুমে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামেই বিক্রি করে থাকি।’
সার্বিক বাজার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট কবির মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমারা কাজ করে থাকি। আপৎকালীন সময়ে তা বেশি হয়ে থাকে। বেশ কিছুদিন আগে মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার জানামতে তা রমজান মাসের জন্য। কিন্তু ঠিক কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা এখন বলতে পারছি না। অফিস টাইমে ফোন করলে অথবা সরাসরি আসলে তথ্য নিশ্চিত করা যাবে।’
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সারা বছর নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্যতালিকা দর্শনীয় স্থানে ঝোলানোর নির্দেশ থাকলেও শুক্রবার কোনো দোকানে তালিকা দেখা যায়নি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/জেএস/এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম