News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০১, ৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ০০:০৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কাজে বিশ্বাসী মনোয়ারা হাকিম আলী

কাজে বিশ্বাসী মনোয়ারা হাকিম আলী

ঢাকা: কাজপাগল মানুষ মনোয়ারা হাকিম আলী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে চেম্বার গ্রুপ থেকে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছে তিনি। নির্বাচিত হলে এ সংগঠনের ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি হবেন তিনি। সম্প্রতি তিনি নিউজবাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার জুনায়েদ শিশির। 

 
নিউজবাংলাদেশ: সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী?
মনোয়ারা হাকিম আলী: দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ঘুরে দেখেছি, ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। কিন্তু কয়েকটি ব্যবসায়িক চেম্বার ছাড়া বাকিগুলোর অবস্থা ভালো না। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা চেম্বারের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আমরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রয়েছি। অথচ জেলার চেম্বারগুলোর অবস্থা চিন্তা না করলে চলবে কী করে। তাই এ জেলাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে বিকেন্দ্রীকরন করতে হবে। প্রত্যেকটা জেলাকে জাতীয় উন্নয়নের অংশীদার মনে করে কাজ করতে হবে। আমি এসব জেলার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। নেতৃত্বে না গেলে এসব উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়। এ কারণে এবার আমি এফবিসিসিআই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
 
নিউজবাংলাদেশ: আপনি তো ব্যবসায়ী পরিবারেই বেড়ে উঠেছেন...
মনোয়ারা হাকিম আলী: ঠিকই বলেছেন। আমার বাবাও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। সেই সুযোগে ব্যবসায়ী পরিবারেই আমার বেড়ে ওঠা। এছাড়া নিজেও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো সহজে বুঝতে পারি। তবে একটা অবস্থানে না থাকলে ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করাও সম্ভব হয় না। এজন্য আমি মনে করি, এ সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত।
 
নিউজবাংলাদেশ: আপনি কতখানি আশাবাদী?
মনোয়ারা হাকিম আলী: চেম্বার গ্রুপ থেকে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে। চেম্বার গ্রুপের নির্বাচনে চেম্বারের নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, তিনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন বলে আজ আমরা নারী হয়ে এখানে আসতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারী ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় আজ নারীর ক্ষমতা বাড়ছে। প্রত্যেকটা সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যদি সুযোগ পাই তাহলে দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য, তাদের মঙ্গলের ও উন্নয়নের কাজ করবো। ব্যবসায়ীদের গুটিকয়েক চাওয়া পাওয়া, এ চাওয়া পাওয়া যদি আমরা সঠিকভাবে বলতে পারি, তাহলে ব্যবসায়ীরা দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
 
নিউজবাংলাদেশ: ব্যবসায়ীদের চাওয়া পাওয়া কী? নির্বাচিত হলে তাদের চাওয়া পাওয়া কীভাবে পূরণ করবেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী: ব্যবসা করতে গেলে ব্যাংকের ওপর ব্যবসায়ীদের নির্ভর করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগই ব্যাংকে সমস্যার সম্মুখীন হন। যদি ব্যাংকের কাছ থেকে সঠিক সহযোগিতা না পায়, তাহলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবো।
 
নিউজবাংলাদেশ: চলমান রাজনেতিক অবস্থার কারণে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আপনাদের পক্ষ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী: বর্তমান কমিটি দেশের নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে আমাদের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছে এফবিসিসিআই। এর মধ্যে জ্বালাও পোড়াও হরতাল অবরোধের মধ্যেই কেটে গেলো, তবুও আমরা হাল ছাড়িনি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছে। তারা ব্যবসার প্রতি এতোটাই আগ্রহী। দেখুন, হরতাল অবরোধের মধ্যেও তারা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছে। হরতাল অবরোধে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এরপরও তারা ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি আমরা ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার জন্য সাপোর্ট দিচ্ছি। তাদের উৎসাহ দিচ্ছি, প্রয়োজনীয় সাহস দিচ্ছি। এর মধ্যে আমরা একটা রিট করার মতো শক্তিশালী পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এটা কীভাবে করা যায় তা নিয়েও আমরা পরামর্শ করেছি।  এছাড়া আরও বলিষ্ট পদক্ষেপ নিবো আমরা। তবে এ ধরেন অস্থির পরিবেশ ভবিষ্যতে হবে বলে মনে করি না।
 
নিউজবাংলাদেশ: হরতাল অবরোধে ক্ষতির পরিমান কত? ব্যাংক ঋণের জন্য কী করছেন। পজেটিভ কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি?
মনোয়ারা হাকিম আলী: ব্যাংক ঋণ মওকুফ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ২ মার্চ মন্ত্রণালয়ে এফবিসিসিআই সভাপতির নেতৃত্বে বিজিএমই, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বৈঠকে আর্থিক ও ব্যাংকিং; বন্দর; বীমা; স্বল্প মেয়াদি রপ্তানি খাতের জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা; বিশেষ নগদ সহায়তা; ইউরো জোনের রপ্তানিকারকদের বিশেষ নগদ সহায়তা এবং জ্বালানি সংক্রান্ত বিশেষ সহায়তার জন্য লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
 
নিউজবাংলাদেশ: বিদেশি বিনিয়োগ বা বিদেশিদের অর্ডার দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কি কমেছে?
মনোয়ারা হাকিম আলী: না, বিদেশিদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমেনি। কয়েকদিন ধরেও দেখছি বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদেশে অনেক সম্ভাবনাময় দেয়, কত প্রসপেক্ট এদেশে। এটা বিদেশিরা বোঝেন বলেই তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে আজ হরতাল অবরোধের মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানি রফতানি হচ্ছে।
 
নিউজবাংলাদেশ: ২০১২ সালে পাস হওয়া ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ভ্যাট আইন সংশোধনের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই প্রস্তাবনা দিয়েছিল। এফবিসিসিআইর সংশোধনী কি পাস হয়েছে?
মনোয়ারা হাকিম আলী: ভ্যাট আইন সংশোধনের বিষয়ে এফবিসিসিআই একটা কমিটি করেছিল। এ কমিটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভ্যাট আইন কীভাবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে সেটি মাথায় রেখে গঠিত কমিটি কাজ করছে।
 
নিউজবাংলাদেশ: এনবিআর বাজেটে প্রস্তাবনা চেয়েছে। নতুন বাজেট কেমন চাচ্ছেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী: নতুন বাজেটের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে দেখবে এফবিসিসিআই। এরপর প্রস্তাবনা দেয়া হবে। সবার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। একদিকে ব্যবসায়ীদের অপরদিকে সরকারকে বাঁচাতে হবে। সরকারকে না বাঁচালে দেশ চলবে কীভাবে। সরকার ভালো পজিশনে আছে বলে রিজার্ভ বাড়ছে। এজন্য আমাদের অভাব নাই। আমরা না বাঁচলেতো সরকার বাঁচবে না। সরকারের উন্নয়ন হবে না এমন কোনো চাওয়া আমরা চাইব না।
 
নিউজবাংলাদেশ: নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণের সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। বাংলদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ পাচ্ছে নারী উদ্যোক্তরা। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধার বিষয়ে আপনার মতামত কি?
মনোয়ারা হাকিম আলী: আমি বলব, ব্যাংকগুলো তেলে মাথায় যেন তেল না দেয়। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার জন্য ব্যাংক যেন সহযোগিতা করে। এসএমই লোন যাতে সঠিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেক্টর বাড়ানোর জন্য। আমাদের প্রচুর পণ্য, বেশির ভাগ রফতানিযোগ্য। হ্যান্ডিক্রাফট অনেক চাহিদাসম্পন্ন পণ্য, যা বিশ্ব বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেগুলো যদি আমাদের গ্রামঞ্চলে, উপজেলা, জেলাতে কাজ হচ্ছে। আমি চেষ্টা করবো প্রথমে একটা জেলা নিয়ে কাজ করার জন্য। নির্বাচিত হলে চলতি কমিটির অসমাপ্ত কাজ করবো। এর মধ্যে ব্যাংক লোন কমিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে।

নিউজবাংলাদেশ: চিটাগাং উইমেন্স চেম্বার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অটো ডাইরেক্টরশিপের জন্য আবেদন করেছে। বিষয়টি সম্পর্কে আপনি কী জানেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী: ফেডারেশনে একটা সিস্টেম আছে, অটো ডাইরেক্টরশিপ। সেটার জন্য চিটাগাং উইমেন্স চেম্বার চেষ্টা করেছিল। সবতো একটা ডিসেন্ট্রালাইসড। তাই আমি চেষ্টা করেছিলাম ডাইরেক্টরশিপের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা হয়েছে। ঢাকা উইমেন্স চেম্বার হয়েছে, বায়রা হয়েছে। এগুলো থাকবেই। আমাদের এটা হয়নি, এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। একজন পজেটিভ বলবে একজন নেগেটিভ বলবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি নির্বাচনে বিশ্বাস করি। চ্যালেঞ্জে বিশ্বাস করি।

নিউজবাংলাদেশ: আপনি কি মনে করছেন দেশের বিরাজমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে এফবিসিসিআই নির্বাচন সঠিকভাবে অর্থাৎ ভোটারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হবে।
মনোয়ারা হাকিম আলী: এটা একটা চিন্তার বিষয়। আমাদের চেম্বারের ভোটাররা বিভিন্ন জেলায়। এসব জেলায়  আসা যাওয়া একটু চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ভোটাররা আসবে। এরপরও তো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। দেখা যাক পরিস্থিতি কী হয়। আমার তো হরতাল অবরোধের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে সময় লেগেছে।
 
যেসব জায়গায় মানুষ যেতে চায় না সেখানে আমি চেলেঞ্জ নিয় এগিয়ে যাই। সুতরাং আমি নারী হিসেবে অনক ক্ষেত্রে মূল্যায়ন পাই না। আমি মনে করি নারীদের সুযোগ অনেক বেশি। আমাদের দেশের নারীদের যে সম্মান তা অন্য কোথাও নেই। নারীর ক্ষমতায়নে এ সরকারের অবদান অনেক বেশি। সকল সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ দরকার।

নিউজবাংলাদেশ: আপনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একজন পরিচালক, পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উন্নয়নে আপনার ভাবনা কি?
মনোয়ারা হাকিম আলী: স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকার এখন ডিমিউচুয়ালিইজেশন করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ড অনেক সক্রিয়। আশা করছি শেয়ার বাজারের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।  লেনদেনে গতি ফিরে আসবে। এছাড়া আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শেয়ার বাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যা করণীয় সে বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
 
নিউজবাংলাদেশ: এফবিসিসিআই সদস্যদের উদ্দেশে কিছু বলবেন কি?
মনোয়ারা হাকিম আলী: এফবিসিসিআই্ মেম্বরদের উদ্যেশে বলব, তারা যেন সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মৌলেক অধিকার। ভোট দেয়াটা মৌলিক অধিকার। আমি আশাবাদী। প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, আমি আরও একবার নির্বাচন করতে পারবো। এবার আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে আগ্রহী। আমার বাবা চেম্বার গ্রুপ করেছেন, আমি সারাজীবন চেম্বার গ্রুপ করেছি। তবে এপেক্স বড়িতে নেতৃত্বে এলে আমি চেম্বার গ্রুপ অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।

নিউজবাংলাদেশডটকম/জেএস

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়