বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয় ২২ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড
ফাইল ছবি
বিদায়ী বছরে দেশে এসেছে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয়। বছরের শেষ পাঁচ মাসে অর্থপাচার কমে যাওয়ায় চলতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বৈধ বা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের পুরো বছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলার।
গত বছর মাত্র দুই মাস মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০০ কোটি ডলার পার করেছিল। চলতি বছর জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে ইন্টারনেট ও ব্যাংক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রবাসীরা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল।
সর্বশেষ চলতি মাসের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২৪২ কোটি ডলার, যা এরই মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাওয়া মাসের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল করোনা অতিমারিকালে ২০২০ সালের জুলাইয়ে।
চলতি ডিসেম্বরের গত ২৮ দিনে দেশে ২৪২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে; দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৯ হাজার ৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
এতে একক মাস হিসেবে প্রবাসী আয়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
গত রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিসেম্বরের ২৮ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে (২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, অক্টোবরে এসেছে ২৪০ কোটি ডলার এবং সর্বশেষ নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সাম্প্রতিককালে রেমিট্যান্সের এই অঙ্ক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
এদিকে দেশে ডলারসংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন হতে থাকলে রেমিটেন্স প্রবাহ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এ সময় রেমিট্যান্স পাঠাতে হুন্ডির প্রভাব নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে চেষ্টা করে। এতে কাজও হয়। বছরের শেষ মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি