প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ হস্তান্তর
প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ হস্তান্তর। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতির ক্ষত ও পরিস্থিতি পরিমাপ করতে একটি কমিটি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের সচিব, ব্যবসায়ী, নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে তিন মাস আলোচনা, পর্যালোচনা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
রবিবার দুপুরে (১ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।
প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে মোটা দাগে যেসব বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো হলো-
* সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা- অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (সরকারি বিনিয়োগ, এডিপি, ভর্তুকি এবং ঋণ), বাজেট ঘাটতির অর্থায়ন।
* মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা- উৎপাদন, সরকারি সংগ্রহ এবং খাদ্য বণ্টন।
* রপ্তানি, আমদানি, রেমিটেন্স, এফডিআই, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক অর্থ প্রবাহ এবং ঋণ।
* চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ এবং ক্রয় চুক্তি।
* ব্যক্তিগত বিনিয়োগ- ক্রেডিট, বিদ্যুৎ, সংযোগ এবং লজিস্টিকসে অ্যাক্সেস।
* দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক মজুরি; যুব কর্মসংস্থান।
প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়-
শ্বেতপত্রটি প্রস্তুতের জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। কমিটির রূপরেখা নিম্নরূপ হতে পারে:
ক) কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন;
খ) পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের যথোপযুক্ত কোনো ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে;
গ) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে;
ঘ) সরকারের সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/ সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে;
ঙ) ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ নামে প্রস্তাবিত কমিটি আগামী নব্বই দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন।
কমিটির ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিভিন্ন খাতের লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি