৯০ দিনে পরিশোধ না হলেই হবে ঋণখেলাপি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
আরও কঠোর করা হয়েছে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঋণ কার্যক্রমে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভবিষ্যতে অনাদায়ী ঋণের বকেয়া সময়সীমা অনুযায়ী খেলাপির স্তর এবং আনুপাতিকহারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত না হলে পর দিন থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। পরিশোধ বা নবায়ন করা না হলে ৩ মাস পর্যন্ত ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ থাকবে। ৩ মাস পর থেকে তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এ বিষয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন এ নীতিমালা আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
১২ বছর পর বিআরপিডি এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং বিষয়ক একীভূত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আগে ঋণের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এখন সব ধরনের ঋণই ৩ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর পরিশোধিত বা নবায়ন করা না হলে তা খেলাপি হয়ে যাবে। বর্তমানে মেয়াদি ঋণসহ কিছু ঋণ খেলাপি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৬ মাস পর। ফলে ঋণখেলাপি হওয়ার সময় ৩ মাস কমে গেলো। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের জন্য নির্ধারিত দিনের পরবর্তী দিন থেকে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। আর মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে হলে নিম্নমান, ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে সন্দেহজনক ও ১২ মাস বা এর বেশি হলে মন্দ বা ক্ষতিকারক মানে খেলাপি করতে হবে।
একই সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড ঋণের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ১ শতাংশ, স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ৫ শতাংশ জেনারেল সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে নিম্নমান হলে সঞ্চিতির ভিত্তির ওপর ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে সঞ্চিতির ভিত্তির ওপর ৫০ শতাংশ ও মন্দ বা ক্ষতি হলে সঞ্চিতির ওপর ১০০ শতাংশ বিশেষ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে।
হাসনাত-সারজিসকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভহাসনাত-সারজিসকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যদি কোনো ঋণ বা অগ্রিম সাব-স্ট্যান্ডার্ড এবং সন্দেহজনক মানে খেলাপি করা হয়, তাহলে ওই ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমা করার পরিবর্তে সুদের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। কোনো ঋণ বা অগ্রিম ক্ষতিজনক মানে খেলাপি করা হলে একই অ্যাকাউন্টে সুদের চার্জ করা বন্ধ হয়ে যাবে।
পুনঃনির্ধারিত ঋণের ক্ষেত্রে অবাস্তব সুদ সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আয় অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না। একই সঙ্গে এ ধরনের ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফাইল করা পর্যন্ত সময়ের জন্য সুদ ও মূল পরিমাণের জন্য একই ফাইল করার জন্য ঋণ অ্যাকাউন্টে মামলা চার্জ করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে লোন অ্যাকাউন্টে ধার্যকৃত সুদ সুদের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট।
এ ছাড়া যদি খেলাপি ঋণ বা এর কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা হয় অর্থাৎ, ঋণ অ্যাকাউন্টে প্রকৃত আমানত কার্যকর করা হয় তাহলে প্রথমে সুদ উল্লিখিত আমানত থেকে আদায় করতে হবে এবং পরে ঋণ সমন্বয় করা হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আপত্তি করে আসছে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ঋণ পরিশোধের দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে শোধ করা না হলে তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু রাজনীতি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও বড় ঋণখেলাপিদের চাপে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখাতে বাংলাদেশে এটি ৬ মাস করা হয়েছিল। মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ৯ মাস করা হয়েছিল। পরে আইএমএফের আপত্তির কারণে কিছু ঋণের ক্ষেত্রে ৩ মাস করা হলেও কৃষি ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ মাস করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।
এদিকে, ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি মিশন। ওই মিশন এবার খেলাপি ঋণ নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্ত ছিল খেলাপি ঋণ কমানো। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ না কমে বরং আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে।
আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। তাদের ওই শর্ত বাস্তবায়ন করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মাধ্যমে আরও কঠোর করলো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি