রোজার আগে আরেক দফা বাড়লো পণ্যমূল্য
আসছে পবিত্র রমজান মাস। তাই দুই মাস আগে থেকেই রোজায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে অসৎ মুনাফাখোরেরা। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে বাজারে সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। আমদানি এবং উৎপাদনও বেড়েছে। তারপরও দাম বাড়ছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আরও এক দফা বাড়ানো হলো।
এদিকে চালের আমদানি ও উৎপাদন বাড়লেও গত সাত দিনের ব্যবধানে আবার সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।
রোজায় বেশি বিক্রি হয় এমন পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে বেড়েছে এলাচ, শুকনা মরিচ, রসুন ও আদার দাম। এছাড়া সব ধরনের সবজির দামও রয়েছে বাড়তির দিকে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায়ও এসব পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। টিসিবি বলছে, সাত দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মাঝারি মানের মসুর ডাল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজ ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজ ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, খেজুর ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম আড়াই শতাংশ, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, পাম অয়েল ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (উপ সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, “দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। বাজারেও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তাই দাম বাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সারা দেশে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কারসাজির প্রমাণ পেলেই অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কেউ যদি রমজানকে ঘিরে পণ্যের দাম বাড়ায় তাহলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে।”
এদিকে রাজধানীর নয়াবাজার, কারওয়ান বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মাঝারি মানের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যা সাত দিন আগে ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন ১২৫ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে। সাত দিন আগে এর দাম ছিল ১২১ টাকা লিটার। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যা সাত দিন আগে ছিল ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। সাত দিন আগে ছিল ৩৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে সাধারণ মানের খেজুর ১২০ টাকা কেজি পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ছোলা কম মূল্যে বিক্রি করছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, শনিবার থেকে রোজা উপলক্ষে খেজুরও কম মূল্যে বিক্রি করবে।
এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে চালের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এ দিন প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, যা সাত দিন আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি, যা সাত দিন আগে ছিল ৫৬ টাকা কেজি। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি, যা সাত দিন আগে ছিল ৪৮ টাকা।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন বলেন, “চালের দামে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। এতে পাইকারি বাজারে বাড়লে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। তবে করোনার প্রকোপ যে হারে বাড়ছে এর মধ্যে চালের দাম বেড়ে গেলে ভোক্তাসাধারণের নাভিশ্বাস বাড়বে। তাই সরকারকে এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।”
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকায়, যা সাত দিন আগে ছিল তিন হাজার টাকা। শুকনা মরিচ সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সাত দিন আগে ছিল ২৮০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি, যা সাত দিন আগে ছিল ১১০ টাকা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ