News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৫ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১০:২২, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

পরিস্থিতি শান্ত হলেও জিডিপি লক্ষ্যে পৌঁছাবে না

পরিস্থিতি শান্ত হলেও জিডিপি লক্ষ্যে পৌঁছাবে না

ঢাকা: আইএমএফ প্রতিনিধি ও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত হলেও জিডিপি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা কর্মসূচি এভাবে চলতে থাকলে দেশের কাঙ্ক্ষিত সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

তাদের মতে, “জিডিপির সূচক ৬ শতাংশ বা তার চেয়েও নিচে নেমে আসতে পারে।”

সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা নিউজবাংলাদেশকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মতামত তুলে ধরেন।  মঙ্গলবার ঢাকা সফরশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনের প্রধান রডরিগো কুবেরো অর্থমন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একই প্রতিক্রিয়া জানান। অর্থনীতির এ ক্ষতির বিষয়টি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেন।

ঢাকা সফরশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনের প্রধান রডরিগো কুবেরো অর্থমন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে চিত্র লক্ষ করা যায়, এতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির ওপর এর বেশি প্রভাব পড়বে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্যমূল্য কম থাকায় মূল্যষ্ফীতি ‘স্বস্তিদায়ক’ অবস্থায় থাকলেও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পণ্য সরবরাহে যে বিঘ্ন ঘটছে তাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।”

তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্টের ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে এ সূচক ছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।

বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিকে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজ উল্লেখ করে ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৫২ দিনে বিএনপি-জামায়াতের হরতালের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি ও অন্যান্যভাবে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।”

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

২০ দলের টানা দুমাসের কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের ২ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেনি। এমনকি রেমিটেন্স, রপ্তানি এডিপির বাস্তবায়নসহ অর্থনীতির সব সূচক গত অর্থবছরের তুলনায় ভালো বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরে সংসদে বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতাল সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতার বক্তব্যে ক্ষতির পরিমাণসহ আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শঙ্কার বিষয় নিয়ে কথা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে।

নিউজবাংলাদেশকে এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সংসদে ক্ষতির পরিমাণ বলেছেন। ব্যবসায়ীরাও বলেছেন। তারপরেও যদি অর্থমন্ত্রী বলেন, ভালো আছে, তো কী বলবো? তবে বর্তমানে অর্থনীতির যে অবস্থা তা সমস্যা না, সমস্যা হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অর্থনীতিতে যে মিস ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে, তা বলা যায় না।”

জিডিপি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে বাণী দিয়েছে সে প্রসঙ্গে এ অর্থনীতিবিদ শঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, “জিডিপি লক্ষ্যমাত্র অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং আইএমএফ যা বলেছে, তার থেকে কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে।”

মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “আইএমফ যে বলেছে ৬ শতাংশ হবে। তা যথার্থ না। তারা হয়তো ‘আপসাইড বায়াস’ হয়ে বলেছেন।  তারা যে কথা বলেছেন তা হবে না। এ অর্থ বছরের অর্ধেকের বেশি সময়তো চলেই গেছে। আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি যদি শান্তও হয়ে যায়, তারপরেও ৬ শাতাংশ হওয়া সম্ভব না। বাকি অল্প সময়ের মধ্যে নতুন করে কী হবে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। কাজেই সাড়ে পাঁচের বেশি হবে না।”

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, “গত মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতির যে ঊর্ধ্বগতি বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে বাড়াটা অপ্রত্যাশিত না। যতোটুকু বেড়েছে তা খুব বেশি মাত্রায় না। এনিয়ে খুব বেশি হতাশ হওয়ার কারণ নেই। বর্তমানে বিশ্ব বাজারের প্রায় সব পণ্যের দাম কমতির দিকে। সেই প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে চালের দাম কমেছে, সে জন্য আমাদের বাজারেও চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সব মিলিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সমস্যা কারণে সামগ্রিক অর্থনীতির সমস্যা হতে পারে। এজন্য অর্থনীতির অবস্থা ভালো বলা যায় না। আর মূল্যস্ফতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কারণ নাই। প্রবৃদ্ধির বিষয়ে যে ৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছে তা হবে বলে আমি মনে করি না।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “চলতি বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সামস্টিক অর্থনীতির একটা স্থিতিশীলতা আছে। তবে যে টার্গেট আছে, সে তুলনায় কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রা পাচ্ছে না। আমি মনে করি, সামষ্টিক অর্থনীতির যে স্থিতির চিত্র, তা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির দিক। তবে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রয়েছে তাতে অন্যান্য সূচকের ফলাফল ভালো হবে বলে মনে করি না।”

তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির বিষয়ে মনে করি, চলমান অস্থিরতায় ‘সাপলাই চেইন’ এর যে সমস্যা হয়েছে, এর ফলে ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে, এটা সত্য। এর কারণে হয়তো ভোক্তার পণ্যের উপর কিছু চাপ হতে পারে।”

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, “আট মাস স্থিতিশীল থাকার পর মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট (মাসওয়ারি) ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যে মূলস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ, জানুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ০১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমেছে। ২০১৪ এর মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/জেএস/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়