মুঠোফোনে বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে হবে
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে লকডাউনে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোকে মুঠোফোনে পুঁজিবাজার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার ওপরে জোর দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, লকডাউনের এই মুহূর্তে বাড়ির বাইরে বের হয়ে সিকিউরিটিজ হাউজে গিয়ে লেনদেন করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি রোধে সবাইকে মুঠোফোনের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয়ের সেবা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
লকডাউন আমাদের বিশ্বকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে এমন মন্তব্যে করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “এসময় প্রযুক্তির মাধ্যমে বাইরে না গিয়েও জরুরি কাজ কর্ম কিভাবে ঘরে বসেই করা যায়, সেই পথ দেখাচ্ছে। তেমনি লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের লেনদেন করছে। যার ফলে ঘরে বসেই মুঠোফোনের মাধ্যমে বিনিযোগকারীরা লেনদেন করায় লকডাউনেও পুঁজিবাজারের লেনদেন উর্ধ্বমুখী।”
তিনি আরও বলেন, “আজ মুঠোফোনে লেনদেন ১২শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থানে করছে। গতকালও লেনদেন ৭০০ কোটি টাকার ঘরে ছিল। যা অন্য স্বাভাবিক সময়ের লেদেনের চেয়ে বেশি। এ ধরনের লেনদেনকে অবশ্যই আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এরপরও মুঠোফোনে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আরো বাড়াতে হবে হাউজগুলোকে।”
অনলাইনের মাধ্যমে মুঠোফোনে ১৯ হাজারের কিছু বেশি বিনিয়োগকারী নিয়মিত লেনদেন করছে, এই সংখ্যা বাড়ানো উচিৎ জানিয়ে তিনি বলেন, কমপক্ষে হলেও এই সংখ্যা লাখে নিয়ে যাবার দরকার। এই সংখ্যা বাড়াতে পুঁজিবাজার রেগুলেটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাজ করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, “লকডাউনে ১২শ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন, যা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক আভা। সবাই নিরাপদে ঘরে বসেই মোবাইল কলের মাধ্যমে লেনদেন করছে।”
সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে সবাইকে সর্বোচ্চ সেবা কিভাবে দেয়া যায়, সেই বিযয়ের ওপরে জোর দিতে হবে আমাদের।”
মঙ্গলবার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৮ জন। মানে পুঁজিবাজারে ওই পরিমাণ বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে যারা নিয়মিত লেনদেন করছে তাদের সংখ্যা প্রায় সাত লাখের মতো। মানে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ বিনিয়োগকারী নিয়মিত লেনদেন করছে। বাকি তিন ভাগ অনিয়মিত লেনদেন করছে। অবশ্য তাদের অধিকাংশই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিনিয়োগ করে থাকে।
ডিএসইর জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, “মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করতে এ পর্যন্ত ডিএসইতে রেজিস্টেশন করেছে ৬৩ হাজার ৩৪০ জন বিনিয়োগকারী। এদের মধ্য থেকে লকডাউনের এ সময়ে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বিনিয়োগকারী নিয়মিত লেনদেন করছে।
এতো কম সংখ্যক বিনিয়োগকারী ডিএসইতে মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করছে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে প্রায় আড়াইশ সিকিউরিটিজ হাউজ রয়েছে। ওইসব সিকিউরিটিজ হাউজের মধ্যে থেকে এক হাজার জনও যদি মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করতে রেজিস্টেশন করতো, তবে তার সংখ্যা দাঁড়াত আড়াই লাখ। তাই শিগগিরই এই সংখ্যা বাড়াতে পুঁজিবাজারের রেগুলেটরদের দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেন তারা।
আরও বলেন, যাদের (বিনিয়োগকারী) কাছে স্মার্টফোন রয়েছে, তারা কেন সময় ও অর্থ ব্যয় করে সিকিউরিটিজ হাউজে আসবে। তারা সরাসরি অনলাইনেই লেনদেন করছে। এছাড়া অনলাইনে লেনদেন রেজিস্ট্রেশন যারা না করেছেন, সেই সব বিনিয়োগকারী সরাসরি মোবাইলে কল করে ক্রয় বিক্রয়ের অর্ডার দিচ্ছে।
এছাড়াও ডিএসইর অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সর্বোচ্চ একটি সীমা রয়েছে। অনেক হাউজ ওই সীমা পার করেছে। এছাড়া অনেক হাউজ অনলাইনের ট্রেড করার মতো সক্ষমতা নেই। এখন রেগুলেটরের উচিৎ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন স্বার্থে সব কিছু মাথা নিয়ে সবাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করা।
মুঠোফোনে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে জানিয়ে মতিঝিলের ব্র্যাক ইপিএল হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, “লকডাউনের এই সময়ে আমাদের বিনিয়োগকারীদের সুবিধায় মোবাইলে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। আমাদের প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তা হোম অফিস করছে। হোম অফিসে সব ধরনের সেবা দেবার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের সব ধরনের প্রযুক্তি বাসায় ব্যবস্থা করে নিয়েছে তারা। এছাড়া অফিসেও মোবাইল ফোনে বিনিয়োগকারীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/এফএ