পদ্মা সেতুর বরাদ্দ পুরোটাই খরচ হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
চলতি অর্থবছরে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ আট হাজার ১০০ কোটি টাকার পুরোটাই খরচ হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) যে সব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না তা মার্চের মধ্যে ফেরত পাঠাতে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর অর্থ ফেরত আসবে কীনা- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশের মানুষের স্বপ্নের এই সেতুর কাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। বাজেটে এর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ আছে তার পুরোটাই ব্যয় হবে। কোনো অর্থ ফেরত আসবে না।”
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে আট হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কোনো একক প্রকল্প হিসেবে এই বরাদ্দ সর্বোচ্চ।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এর মধ্যে মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা লাগবে নদীশাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়কসহ আনুষঙ্গিক কাজে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু চার বছরে নির্মাণ সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই সেতুর কাজ ১৫ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গত কয়েকদিনে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিভুক্ত ১ হাজার ২৮৭টি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সংবাদ সম্মেলন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এখন থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করবে। এজন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন উইং-এ ডেটাবেইজভিত্তিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) স্থাপন করবে।
“এর ফলে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত অথবা সরকারি অর্থায়নে যে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায় তা সহজেই খুঁজে বের করা যাবে।
“এছাড়াও স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে একটি পুল তৈরি করা হবে যাতে করে মন্ত্রণালয়গুলোকে পরামর্শ দেওয়া যায় যে, কোন প্রকল্পে কোন পরিচালককে নিয়োগ দিলে ভাল হবে।”
‘প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যারা ভালো করবেন তাদের বেশি দায়িত্ব দেওয়া হবে’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রকল্প পরিচালকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
“চলতি অর্থবছরে বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত যাবে। এ বিষযটিতে আমাদের নজর দিতে হবে। বৈদেশিক অর্থ ব্যবহৃত না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের হারও কমে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। উন্নয়ন সহযোগিরাও ভাবে আমাদের সক্ষমতা নেই।”
কেনো বিদেশি সাহায্য ফেরত যায়- এ প্রশ্নের উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, “অনেক প্রকল্প আছে যেখানে পরামর্শক নিয়োগেও তাদের অনুমতি লাগে। কোন কমপোনেন্ট পরিবর্তন করতে হলেও তাদের অনুমোদন লাগে। এতে সময় যায়।
“আবার এটাও ঠিক আমাদের অনেক প্রকল্প পরিচালকদের যোগযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রকল্প ফরম্যাট শুদ্ধভাবে পূরণ করতে হবে। এজন্য প্রতি বছর তাদের সাথে আমরা বসব। যাতে করে আমরা জানতে পারি আমাদের অর্জন কি হলো এবং আমাদের সমস্যাগুলো কী?”
প্রকল্প বাস্তবায়নে টেন্ডার কার্যক্রম তাড়াতাড়ি শেষ করার উপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, “প্রজেক্টগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে একটি টেন্ডারের পরিবর্তে একই সাথে একাধিক টেন্ডারে কাজটি ভাগ করলে কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ হবে। সেই সাথে বিভিন্ন ঠিকাদারদের একসাথে কাজ দিয়ে দিলে প্রকল্পটি সময়মতো শেষ হবে।”
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব সফিকুল আজম ও আইএমইডি সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম