ছুটিতে শেয়ারবাজার চালু সম্ভব না: ডিএসই পরিচালক
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শেয়ারবাজার বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রনায় আছে ব্রোকাররা। আমরা চাই বাজারটি খুলে যাক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার চালু রাখা সম্ভব হলেও সরকারি ছুটিতে আমাদের দেশে সম্ভব না বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
সোমবার বিকেলে এক মেইলের মাধ্যমে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, শেয়ারবাজার বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রনায় আছে ব্রোকাররা। আমরা চাই বাজারটি খুলে যাক। এছাড়া খোলার অপেক্ষায় আছি। কিন্ত করোনা ভাইরাসের বাস্তবতায় সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে কয়েক ধাপে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রীয় ছুটির পরিবর্তে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার চালু রাখা সম্ভব হলেও আমাদের দেশে সম্ভব না। কারন সরকারি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে আইনগতভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এর আওতায় বিএসইসি, সিডিবিএল ও স্টক এক্সচেঞ্জও রয়েছে। শেয়ার বাজার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র যা বিশ্ব স্বীকৃত৷ দৈনিক লেনদেনের ভিওিতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন৷ এখানে হাজার হাজার লোক কর্মরত৷
আরও বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুধুমাত্র মতিঝিল বা ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই কার্যক্রম চলে পুরো দেশজুড়ে৷ যেখানেই এই কার্যক্রম চলে, সেখানেই লোক সমাগম হয়। বর্তমান ২৮টি জেলাশহর লকডাউন ঘোষনা করেছে৷ রাজধানীর এলাকা ভিওিক অনেক জায়গায় লকডাউন করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন জেলা ও এলাকা লকডাউনের আওতায় আসছে৷ সেই সাথে নতুন আক্রান্তের হারও বাড়ছে৷ এছাড়াও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে কোম্পানির তথ্য উপাওের ভিওিতে৷ সরকারী সাধারণ ছুটি থাকায় তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির তথ্য উপাও তাদের অজানা৷
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের কিছু পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দেশে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান একক সত্ত্বা হলেও আমাদের এখানে ভিন্ন। বাংলাদেশে বিএসইসির আইনী বিষয়গুলো এবং সিডিবিএলের উপর লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয় নির্ভর করে। ফলে এ দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজার খোলা রাখা সম্ভব না। এছাড়া ছুটির মধ্যে ব্যাংকের লেনদেন সময় সীমিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব না।
ডিএসইর লেনদেন অটোমেটেড হলেও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি বলে জানান মিনহাজ মান্নান ইমন। তবে চায়নার কারিগরী সহযোগিতায় সেই লক্ষে অচিরেই পৌঁছে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও বলেন, মোবাইল অ্যাপটি চালু করা হলেও সেভাবে ব্যবহার হয় না। এ মুহুর্তে মোবাইলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা মোট বিনিয়োগকারীর মাএ ০.৫২ শতাংশ৷ অথচ চায়নায় শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৯৫ শতাংশ লেনদেনই মোবাইলে হয়। তবে আমাদের দেশেও হবে, একটু সময় লাগবে। ব্যাংকের লেনদেনও খুব সীমিত পর্যায়ে রয়েছে৷ স্বল্প সংখ্যক ব্যাংকের স্বল্প সংখ্যক শাখা চালু রয়েছে৷ স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন এখনো ব্যাংকে চেক দেওয়া-নেওয়া করে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে হয়। ফলে এই মুহূর্তে ঘরে বসে লেনদেন করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, দেশের অজস্র ভবনকে লক ডাউনের আওতায় ফেলা হয়েছে। এই তালিকায় অনেক ব্রোকারেজ হাউজও পড়েছে। এছাড়া লক্ষ্যাধিক বিনিয়োগকারী লক ডাউনের আওতায় রয়েছে। এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের আপাময় কোটি জনতার ন্যায় বিনিয়োগকারী, বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের মূল্য আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে জীবন, পরে ব্যবসা। তবে সরকারি ছুটি শেষে শেয়ারবাজার চালু করতে একমুহূর্তও দেরি করতে চাই না। কিন্ত বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে লেনদেন চালু করা নিতান্তই অসম্ভব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/এএস