News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
আপডেট: ১৩:৫১, ২২ মে ২০২০

নজরুল ও নার্গিস

নজরুল ও নার্গিস

 

কবি নজরুল ১৯২১ সালের ১৭ই জুন নার্গিসকে বিয়ে করেন এবং ১৮ই জুন স্ত্রীকে কুমিল্লার দৌলতপুরে রেখেই তিনি কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে বিরজাসুন্দরীর সাথে তার বাড়ীতে চলে যান। কবি নার্গিসকে তুলে নেবার কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু কথা রাখেননি। কমরেড মুজফ্ফর অাহমদ ১৯২১ সালের ৬ ই জুলাই কুমিল্লা অাসেন এবং কবিকে নিয়ে ৮ ই জুলাই কলকাতা ফিরে যান। কবি তারপর কয়েকবার কুমিল্লা গেছেন প্রমীলা দেবীকে বিয়ের অাগ অবধি কিন্তু একবারের জন্যও দৌলতপুর যাননি নার্গিসকে দেখতে। তিনি কিন্তু বিবাহ-বিচ্ছেদও নেননি। ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি প্রমীলা দেবীকে বিবাহ করেন।

নার্গিসেরর মামা অালী অাকবর খান নজরুলকে ফিরিয়ে অানতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে ১৯২৫ সালে নার্গিস, মামার সাথে ঢাকা অাসেন, মামা তখন বাংলা বাজারের পুস্তক ব্যবসায়ী। নার্গিস প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ইডেন কলেজে ভর্তি হন। নার্গিস নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেন। এই সময়ে তিনি কবিকে ৪ টি চিঠি লেখেন। কবি প্রথম চিঠির কোন জবাব দেননি। ২য় চিঠির জবাবে একটি গান লিখে পাঠান। যার প্রথম কয়েকটি লাইন--------------

"যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই

কেন মনে রাখ তা'রে?

ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে।"

নার্গিস কবিকে ভুলেননি। অাবার চিঠি লেখেন এবং ঢাকায় এসে দেখা করার অনুরোধ করেন, অন্যথায় অাত্মহত্যার হুমকি দেন। তিনি প্রমীলা দেবীকে মেনে নেবেন বলেও জানান তবু কবি যেন একটিবারের জন্য হলেও ঢাকায় এসে দেখা করেন। কবি ১৯৩৭ সালের ১লা জুলাই নার্গিসকে মহামানবসুলভ এক চিঠি লেখেন, নানা উপদেশ দিয়ে। তিনি নার্গিসকে স্বয়ম্বরা হবার উপদেশ দিয়ে লেখেন, "তুমি যদি স্বেচ্ছায় স্বয়ম্বরা হও, অামার তাতে কোন অাপত্তি নেই"।

এর পর নার্গিসের অাশা করার কিছু থাকে না। তবু তিনি শেষ চেষ্টা করেন। ১৯৩৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর তার মামার বন্ধু, মোমেনশাহীর হেলাল উদ্দিনের সাহায্যে মামাতো দু'ভাইকে সাথে নিয়ে কলকাতার 'শিয়ালদহ হোটেলে' কবির সাথে দেখা করেন। কবি তাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং বলেন, 'তুমি যাও, অামি ইমিডিয়েটলি ঢাকা অাসছি, একটা সুরাহা করবো'।

তিনি ঢাকা সহসা অার এলেন না। অবশেষে অাইনসম্মতভাবে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নার্গিস, নজরুলের এককালীন স্নেহাস্পদ কবি অাজিজুল হাকিমকে বিয়ে করেন। নার্গিস 'তহমিনা' 'ধূমকেতু' ও 'পথিক হাওয়া' নামের তিনটি উপন্যাসও লেখেন।

নজরুল ও নার্গিসের শেষ দেখা ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরের কোন এক সময় তার স্বামী কবি অাজিজুল হাকিমের ব্যবস্হাপনায় তার বাংলাবাজারের বাসায়। শেষ সাক্ষাতে নার্গিসকে দেখে কবি কেঁদে ফেলেন। নজরুল জানতে চাইলেন দৌলতপুরে তোলা তাদের যুগল ছবিটা তার কাছে অাছে কিনা। নার্গিস ছবিটা এনে দিলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন,

"সারা জীবন অামি শয়তানের পাল্লায় পড়ে তোমার প্রতি শুধু অবিচারই করেছি। এ জীবনে তার প্রায়শ্চিত্ত শেষ হবে না।  আমাকে তুমি ক্ষমা করো"। তারপর কবি চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে যান।

তারপরও নার্গিস আরো ৪৫ বছর বেঁচে ছিলেন। ম্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৭১ সালে তিনি ছেলের কাছে ম্যানচেস্টারে চলে যান। সেখানেই তিনি মারা যান ১৯৮৫ সালের ২রা জুন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/টিএবি

নজরুলের নির্বাচিত সাহিত্যকর্ম পর্তুগীজ ও স্প্যানিশে

 

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়