বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া ‘জড়িত থাকার’ প্রমাণ আছে: মন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ‘জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে’ মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, সেসব প্রমাণ ‘যথাসময়ে’ জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
রোববার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা বলছি যে, জিয়াউর রহমান সাহেব বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত। সেই হিসেবে আমরা তাকে খুনি হিসেবে বলেছি। তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তিনি খুনের সাথে জড়িত নয়। আমরা জবাবে বলেছি, তার কী সম্পৃক্ততা আছে সেটার দালিলিক প্রমাণ ও তথ্যাদিসহ আমরা জাতির কাছে উপস্থাপন করব।”
সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রস্তাব করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।
বিএনপি ওই সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। জামুকার ওই এখতিয়ার আছে কি না, সেই প্রশ্নও তারা তুলেছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, জামুকা এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
“প্রস্তাব, এটা তো আপনারা দেখেছেনই। আমরা তো প্রস্তাবের মালিক, আমরা প্রস্তাব করেছি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “বিএনপির মূল কথা হল, তিনি (জিয়াউর রহমান) হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। আমরা বলেছি, তিনি যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত আমাদের কাছে তার প্রমাণ আছে। আমরা ইনশাআল্লাহ যথাসময়ে প্রমাণসহ জাতির সামনে পেশ করব। ওয়েট অ্যান্ড সি।”
মুক্তিযুদ্ধে একটি সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে সেনাপ্রধান হন।
৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তখনকার মেজর জেনারেল জিয়া। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক।
১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, জিয়া তখন ওই দায়িত্বও নেন।
সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ার দাবি করা হয়।
সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। তবে সে দল তখন দেশের রাজনীতিতে নাড়া দিতে পারেনি।
ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পদে থেকে পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান জিয়া। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হন।
নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন সে সময় রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়া।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সময়ে তার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। ২০০৫ সালে হাই কোর্টের এক রায়ে ওই সংশোধনী অবৈধ হয়ে যায়।
আর ২০১০ সালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায়ে হাই কোর্ট বলে, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমানের মতো এইচএম এরশাদও ছিলেন ‘অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী’।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, যদিও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দশ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জিয়াও ওই হত্যাকাণ্ডে ‘পুরোপুরি’ জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় সে সময় একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন তখনকার ‘স্বঘোষিত’ রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে খুনিদের রক্ষার পথটি স্থায়ী করার প্রয়াস চালান। হত্যাকারীদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি