News Bangladesh

সুদীপ্ত শামীম, গাইবান্ধা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
আপডেট: ১৪:১৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গাইবান্ধায় ‘সংকট’ দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টিএসপি-পটাশ সার 

গাইবান্ধায় ‘সংকট’ দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টিএসপি-পটাশ সার 

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

গাইবান্ধায় সার সংকট দেখিয়ে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার সরকারনির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার জেলার অনেক এলাকায় বাড়তি দামেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না টিএসপি। সারের এই সংকটে জেলায় বিভিন্ন রবি ফসলের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, রবি মৌসুমের শুরুতে সারের চাহিদা বেশি থাকায় ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বাজারে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন।

ডিলাররা বলছেন, এই মৌসুমে সারের ব্যাপক চাহিদা। এখন চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সারের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করছেন গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরকারনির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি টিএসপি ২৭ টাকা ও এমওপি বা পটাশ ২০ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ সারের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা টিএসপি ৩২ থেকে ৪০ টাকা, এমওপি বা পটাশ ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, আমি ৭০ শতক জমিতে আলু বপন করেছি। এ জন্য টিএসপি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০ টাকার স্থলে ২ হাজার ২০ টাকা, এমওপি বা পটাশ ১ হাজার টাকার স্থলে ১ হাজার ১২০ টাকা এবং ডিএপি ১ হাজার ৫০ টাকার স্থলে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে।

গাইবান্ধা সদরের মোল্লার চর ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৬ শতক জমিতে আলু বপন করেছি। এজন্য বাজার থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে টিএসপি ও ২২ টাকা দরে পটাশ সার কিনেছি।

জাতীয় কৃষক সমিতির সাদুল্লাপুর উপজেলার সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার পাওয়া যায়। কিছু কিছু ডিলার মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। বিক্রেতারা কৃষককে বিক্রয় রসিদ দিচ্ছেন কিন্তু বাড়তি দাম রসিদে লিখছেন না। প্রতিবাদ করলে সার বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

সাদুল্লাপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা বেলাল মিয়া জানান, চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে টিএসপির সরবরাহ কম।

তিনি আরোও বলেন, ডিলাররা সরকারনির্ধারিত দরে আমাদেরকে সার দিচ্ছেন না। এ কারণে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা বিএসডিসির এক সার ডিলার জানান, আমন ধান কাটার পর কৃষকরা একসঙ্গে বিভিন্ন রবি শস্যের চাষ শুরু করেন। এ কারণে অন্য সময়ের চেয়ে এখন টিএসপি, পটাশ ও ডিএপির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বরাদ্দ স্বাভাবিক সময়ের মতো অর্থাৎ অন্যান্য মাসের মতোই দেওয়া হয়। এ কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসির অন্য এক সার ডিলার জানান, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। তিনি আরো বলেন, 'এখনো গত নভেম্বর মাসের সার অনেক ডিলারকে সরবরাহ করা হয় নাই। এই কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।' 

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম রিপন বলেন, জেলায় টিএসপির চাহিদা বেশি। কিন্তু ডিএপি সারের বরাদ্দ বেশি। এ কারণে টিএসপির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

তবে জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নাই বলে দাবি করেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম। 

তিনি বলেন, বিসিআইসির ১১৩ জন ও বিএডিসির ১৫২ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলার ৭ উপজেলায় সার সরবরাহ করা হয়। তাদের ওপর আমাদের নিয়মিত মনিটরিং আছে। কোথাও অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এপর্যন্ত সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে একাধিক সার ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়