News Bangladesh

নওগাঁ সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১৪ মার্চ ২০২১

১৫ তরুণের সাফল্য, বীজবিহীন লেবুর আবাদ

১৫ তরুণের সাফল্য, বীজবিহীন লেবুর আবাদ

নওগাঁয় ১৫ জন তরুণ গড়ে তুলেছিলেন ‘সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’। জেলার রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে শুরু হয় তাদের পদচারণা। এই তরুণদের হাত ধরেই সুফলা খামারে আবাদ শুরু হয় বীজবিহীন ‘চায়না-৩’ জাতের লেবুর। আর তাতে মিলেছে অভাবনীয় সাফল্য। তাদের এই সাফল্য এলাকার অন্য চাষিদেরও এই বীজবিহীন লেবু চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। ধীরে ধীরে কাশিমপুর ইউনিয়ন লেবু অঞ্চল হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পাবে বলে প্রত্যাশা ‘সুফলা নওগাঁ’র।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে ২০১৯ সালের শুরুতে ২ একর পতিত জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা নেন ১৫ জন তরুণ উদ্যোক্তা। ওই সময় নাটোরের ভাতুরিয়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে ৫০০ পিস ‘চায়না-৩’ লেবুর চারা সংগ্রহ করেন তারা। গড়ে তোলেন ‘সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’। এর পেছনে অবশ্য আগ্রহটা বেশি ছিল বর্তমানে এই প্রজেক্টের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মোকাদ্দেস সরকারের।

সম্মিলিত এ কৃষি উদ্যোগে যুক্তরা জানালেন, বর্তমানে তাদের বাগানে রয়েছে ৭০০ পিস ‘চায়না-৩’ লেবু, ২০০ পিস পেয়ারা, ৬০০ পিস ড্রাগন ও ২০০ পিস মাল্টার গাছ। তবে বাগানে সব থেকে ভালো ফল দিচ্ছে ‘চায়না-৩’ লেবু। এমন ফলন তাএদর প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।

পরে এই বাগান থেকে লেবুর চারা সংগ্রহ করে কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ১০ কাঠা, কাশিমপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা এক বিঘা, চককুতুব গ্রামের মিন্টু এক বিঘা, কুজাইল গ্রামের রাকিব ১০ কাঠা এবং আব্দুর রাজ্জাক ও মোখলেছুর রহমান চার বিঘা জমিতে চায়না-৩ জাতের লেবুর বাগান করেছেন।

চাষিরা জানিয়েছেন, পতিত জমিতে প্রথমে বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি হারে ডলোচুন দিয়ে ১৫ দিন ফেলে রাখা হয়। এরপর ষড়ভূজ পদ্ধতিতে ৬ ফুট দূরত্বে বেড তৈরি করা হয়। গর্তের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ডিএপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম জিপসাম,৫০ গ্রাম দস্তা, ২৫ গ্রাম বোরন মিশিয়ে ১৫ দিন আবারও ফেলে রাখা হয়। এরপর ১২ ফুট দূরুত্বে লেবুর চারা লাগানো হয়। দেশে যত জাতের লেবু পাওয়া যায়, তার মধ্যে এ জাতের লেবুর ধারণক্ষমতা বেশি এবং সারাবছর এর ফলন পাওয়া যায়।

‘সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্টে’র অর্থ সম্পাদক মোকাদ্দেস সরকার বলেন, “বছরে ১০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ১০ বছরের জন্য দুই একর জমি ইজারা নিয়েছি। অন্য ফলের গাছ থাকলেও বাগানে চায়না-৩ লেবু সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেড় থেকে দুই হাজার পিস লেবু তোলা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে প্রতি হাজার লেবু পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। গত দুই বছরে লেবু বিক্রি হয়েছে দুই লাখ টাকার। এছাড়া এক লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি। চারার চাহিদাও বেশ। এ বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে আশপাশে অনেক বাগান গড়ে উঠেছে।”

সুফলা অ্যাগ্রো’র সভাপতি হাবিব রতন বলেন, “চারা লাগানোর তিন মাস পর ফুল ও ছয় মাস বয়স থেকে ফল আসা শুরু হয়। এ লেবু বীজবিহীন, রস বেশি, গাছে ফলের পরিমাণ বেশি, আলাদা ফ্লেভার এবং টক অনেক কম। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি লেবু চাষে উপযোগী। পোকামাকড়ের উপদ্রবও কম। অল্প সময়ে ও অল্প খরচে লেবু চাষ করা সম্ভব। গাছ যত বড় হবে লেবু তত বেশি হবে। আমরা বাগান থেকে সফল হবো বলে আশাবাদী।”

কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজমা সুলতানা সাথী বলেন, “কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে এবং কৃষকদের উদ্যোগে একটি মিশ্র ফল বাগান করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতাসহ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বাগানে চায়না-৩ জাতের লেবুতে চাষিরা সফলতা পেয়েছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।”

এই ইউনিয়ন একসময় লেবু অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়