News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০১৯
আপডেট: ১৮:১৭, ১৭ জুন ২০২০

আমার দেখা একজন সাধারণ প্রধানমন্ত্রী

মুনা মুসতাফা

আমার দেখা একজন সাধারণ প্রধানমন্ত্রী

জন হাওয়ার্ড ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোট ১১ বছর ২৬৭ দিন অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা অনেকটা সাধারণ মানুষের মতই চলাফেরা করে আবার কাউকে কোনদিন ক্ষমতারও অপব্যবহার করতে শুনিনি, অপ্রয়োজনীয় সম্পদ বানানোর কথাও শুনিনি।

আমি সিডনি এয়ার পোর্টে একটা পার্টটাইম জব শুরু করেছি। জবটি বেশ এনজয় করছি, তার প্রধান কারণ হলো সিডনির বেশির ভাগই জব নাকি বোরিং। জব নাকি জবই, আর আমি এখানে ফেস করছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কমিউনিটিদের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষদের ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, উচ্চারণে থাকে বৈচিত্র্যতা। কাজের মাধ্যমে অনেক মানুষের সর্বোচ্চ ভাল এবং সীমাবদ্ধতা দুটোই দেখছি যেমন স্কেনিংয়ে কারো লোশন ২০০ গ্রাম থাকলে তার নিজের ব্যাগটি খোলে ফেলে দিতে চাইলে অনেকে আবার দাবি করে বসে সে নাকি প্রায় অর্ধেক ব্যবহার করে ফেলেছে, সুতরাং সে ফেলতে অপরাগতা, তর্কও করতে চায়, তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে সিকিউরিটিকে ডাকতে হয় অনেকটা মনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও! 

এখন চলছে স্কুল হলিডে আর ইস্টারের ছুটি, এয়ারপোর্ট ছিল অনেকটা ফাঁকাই। আজ আমার ডিউটি ছিল লাগেজ স্কেনিংয়ে। হঠাৎ স্কেনিংয়ে চোখে পরল একটা ব্যাগে ১২০ গ্রাম ওজনের হেয়ারজেল। সাবারণত ১০০ গ্রাম পর্যন্ত আমাদের এলাও করতে বলা হয়েছে। আমি ব্যাগের মালিককে বলি এই ব্যাগে ১২০ গ্রামের একটি হেয়ার জেল আছে, আমাকে এটা বিনে ফেলে দিতে হবে। সে স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয় “Dont worry, do your job.” আমি বের করে ফেলে দিই, আমার সেই ব্যাগটিই ছিল প্রাক্তন এই প্রাইম মিনিস্টার জন হাওয়ার্ডের, আমি তাঁরই ইন্টারভিউ নিচ্ছি। সাধারণ পোশাকে আমি তাকে চিনতে পারেনি, আমার সহপাঠী যখন বলে, উনি জন হাওয়ার্ড। এরই মধ্যে আমি তার জেলটি বিনে ফেলে দিয়েছি! আমি তার নাম শোনার পর অনেকটা হতভম্ব হয়ে যাই, তাকিয়ে দেখি জন হাওয়ার্ড, তার সাথের এয়ার পোর্টের সিকিউরিটিসহ হেসে দিয়েছে, সাথে সাথে আমারও হাসি চলে এসেছে। ‘থ্যাংক ইউ’ বলতেই স্বাভাবিকভাবেই সিকিউরিটি তাকে নিয়ে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় সিকিউরিটিকে দেখে মনে পরলো, আরে এই সিকিউরিটি অফিসারই তো তার ব্যাগটি আসার আগেই স্কেনিং সেকশনে এসে কি যেন বলতে চাইছিল কিন্তু সবাই ব্যস্ততার কারণে সে কিছু না বলেই চলে যায় জন হাওয়ার্ডের পাশে।

এই অল্প একটু সময়ই আমাকে দারুন আপ্লুত করে, এত বড় মাপের মানুষ এই সামান্য হেয়ারজেলটা নিয়ে তার লাগেজ খুলতে চাইলে সে যখন বলে, ‘Dont worry, do your job’ চলে যাওয়ার সময় Thank you, এই শব্দগুলো এখনও আমার কানে বাজছে হয়তো সে শুনতে পাচ্ছে না। আইনের প্রতি একজন প্রাইম মিনিস্টার হয়েও আইনকে কীভাবে শ্রদ্ধা করে এত বড় মাপের মানুষের কাছ থেকে দেখে নিজেকে আইনের প্রতি আরো শ্রদ্ধা করতে ইন্সপায়ার আসে। 

অস্ট্রেলিয়াতে আগেও অনেক মন্ত্রী-এমপিদের খুব কাছে থেকে দেখেছি। একবার খুব কাছে থেকে প্রাইম মিনিস্টার কেভিন রাডকে দেখেছিলাম উনিও দুইবারের জনপ্রিয় প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন, তাঁর নিজের লেখা বইয়ে অটোগ্রাফও নিয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির বিরোধীদলীয় মন্ত্রী, মিনিস্টার অব শেডো- টনি বোর্ক, নিউসাউথ ওয়েলসের এমপি জিহাদ দিপ, স্টেট ফিল্ডের এমপি জডি, এমপি মার্ক কোরি, এদের কমিউনিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখে মনে হয় এরা জনগণেরই প্রতিনিধিত্ব করেন।

লেখক: মুনা মুসতাফা, সিডনি প্রবাসী।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়