নির্বাচন কবে, এ কথা বলার ক্ষমতা প্রেস সচিবকে কে দিলেন: জাহিদ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নির্বাচন কবে হবে এ কথা বলার ক্ষমতা প্রেস সচিব কে দিলেন?
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের দেওয়া বক্তব্যে ‘জনমনে বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন এমন প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে… উনাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) বক্তব্য কোনটা বিশ্বাস করব? প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে (২৫ সাল) এবং ২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে।”
“পরের দিনই উনার (প্রধান উপদেষ্টা) প্রেস সচিব বললেন, এটা আবার ২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত যেতে পারে। উনাকে (প্রেস সচিব) ক্ষমতা কে দিল?”
প্রধান উপদেষ্টাকে সবাই মিলে, দেশের মানুষ মিলে মনোনীত করেছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
প্রেস সচিবের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জাহিদ বলেন, “প্রেস সচিব মহোদায়… আপনি তো সরকারি চাকুরি করেন, সরকারের বেতন নেন… আপনি (প্রেস সচিব) কোত্থেকে এই ক্ষমতা পেলেন আপনি আপনার প্রধান উপদেষ্টাকেও ক্রস করে চলে গেলেন।”
“কাজেই আমাদের জানতে আগ্রহ হয়… কোনটা ঠিক।”
তিনি বলেন, “আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরা ঠিক করুন কে কোন কথা বলবেন, দায়িত্ব নিয়ে বলবেন। একেকজন একেক কথা বললে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি হবে।”
“আমরা চাই, আপনারা সার্থক হউন, সফল হউন। মানুষ বিভ্রান্ত হোক… এরকম কোনো বক্তব্য থেকে সবসময় আপনাদের নিবৃত্ত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ বলেন, “আরও কয়েকজন বলেছেন, ৫৩ বছরে রাজনীতিবিদরা নাকি সংস্কারই করে নাই। আরে ভাই, সংস্কার যদি না-ই করতো… এদেশ ছিল প্রথম ’৭৫ সালের বাকশালের পরবর্তিতে প্রেসিডেনশিয়াল ফর্ম অব গভমেন্ট… তার পরবর্তিতে একদলীয় শাসন… জিয়াউর রহমান সাহেব এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন… এটা সংস্কার না?
“তারপরে চারটা মাত্র পত্রিকা ছিল, সব পত্রিকা খুলে দিলেন … এটা সংস্কার না?”
একইভাবে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিদেশে চাকরি, রেমিটেন্স, তৈরি পোশাক খাত গড়ে ওঠার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “৯১ সালে ছিল প্রেসিডেনশিয়াল ফর্ম অব গভমেন্ট.. তারপরে খালেদা জিয়ার গভমেন্ট আনলেন সংসদীয় গণতন্ত্র… এটা সংস্কার না? তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে সংযোজিত হল সেটা কি সংস্কার না? তাহলে সংস্কার, এটা হাওয়া-বায়বীয় নাকি?
“কাজেই সংস্কার এমন কোনো জিনিস না যে সংস্কার একটা হয়ে থেমে থাকবে। সংস্কার হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া… দেশের মানুষের আকাঙ্খাকে ধারণ করা, সেই অনুযায়ী দেশ শাসন করার বন্দোবস্ত করা … সেটিই হচ্ছে প্রকৃত শাসন, প্রকৃত যারা দায়িত্ব পান তাদের দায়িত্ব… সেটিই হচ্ছে সংস্কার।”
এ সময় জাহিদ হোসেন ২০১৬ সালে খালেদা জিয়ার ‘ভিসন-২০৩০’, ২০২২ সালের সব বিরোধী দলকে নিয়ে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সংস্কার তো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেকদিন আগে থেকেই চিন্তা করছে। কাজেই যারা সংস্কারের কথা বলেন, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।
“আমি বলব, সংস্কারের কথা বলে নিজেদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করা যাবে না। জনগণের মনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। জনগণের আশা-আকাঙ্খার সাথে নিজেদেরকে সামলে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হবে।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধবগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে এবং তা রোধে জনগণের সরকারের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ভারত সরকার ও মিডিয়ার অপপ্রচার এবং ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে সভপতিত্ব করেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নুরুল ইসলাম বেপারী, ইসলামী ঐক্য জোটের মাওলানা আবদুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, জাগপার রাশেদ প্রধানসহ ১২ দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি