বস্তায় আদা চাষে ৫ গুণ লাভের হাতছানি
ছায়াযুক্ত জায়গাতেও বস্তায় আদা চাষ করা যায়। তারই উদাহরণ তৈরি করেছেন আজিজুল। ছবি: নিউজবাংলাদেশ
দুই বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন টাঙ্গাইলের সখীপুরে নেদারল্যান্ড প্রবাসী আজিজুল ইসলাম। প্রথমবার শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে ছয়শ বস্তায় আদা চাষ করে সফলতা পান তিনি।
সে সফলতাকে পূঁজি করে এবছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। উপযুক্ত ফলন ও দাম পেলে এই আদা বিক্রি করে ৮০ লাখ টাকা পেতে পারেন বলে আশা করছেন এই চাষি। সে হিসেবে আদা চাষে আজিজুলের লাভ হবে প্রায় ৫ গুণ।
সরেজমিনে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নে বহুরিয়া মধ্যপাড়া এলাকায় প্রবাসী আজিজুলের বাড়িতে গেয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়, কাঁঠালগাছ এবং পরিত্যক্ত আমবাগানের নিচ দিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গাতেই সারি সারি বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে আদা গাছ বড় হয়েছে, ফলনও আসতে শুরু করেছে। আজিজুলকে দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন। এ বস্তায় আদা চাষ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষ।
আজিজুল জানান, তার বাবা কৃষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে বড় হয়েছেন। ৪০ বছরের বেশি সময় পরিবারসহ প্রবাসে থাকলেও দেশের মাটি ও কৃষিকে ভুলতে পারেননি তিনি। প্রবাসে বসে ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই বছর আগে প্রথম ছয়শ বস্তায় আদা চাষ করেন। ফলনও পান ভালো। হিসাব শেষে দেখেন এটি খুব লাভজনক। তাই এবছর খাগড়াছড়ি থেকে ৩০ মণ আদা এনে আর গত বছরের ৪ মণ আদা বীজসহ রোপন করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি বাণিজ্যিকভাবে প্রায় এক একর জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি এবং আমার ৫০ শতাংশ বড়ই বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাটিতে আদা চাষ করেছি। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আল্লাহ্ যদি রহমত করে ৮০ লাখ টাকার আদা বিক্রির আশা করছি। এ কাজে তার স্ত্রী তাকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতায় করছে বলে জানান তিনি।
বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। বাড়ির উঠান, অনাবাদী কিংবা পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত জায়গাতেও চাষ করা যায়। প্রথমে বেলে দোআঁশ মাটির সাথে বালু, কচুরিপানা, ছাই, গোবর, ভূষি, খৈল, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশিয়ে এক মাস ঢেকে রাখেন আজিজুল। পরে আবার মাটি মিশ্রণ করে বস্তায় ভরে, আদা শোধন করে প্রতি বস্তায় ৫০-৬০ গ্রাম করে আদা রোপন করেন তিনি।
মাটির তুলনায় বস্তায় সুবিধা অনেক বেশি। বস্তায় চাষ করলে আদার কন্দ পচা রোগ খুব কম হয়। আর হলেও আক্রান্ত বস্তাটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলা যায়। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে নতুন এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করার ইচ্ছের কথা জানান আজিজুল।
আজিজুলের স্ত্রী শামীমা ইসলাম বলেন, আমার বাবা এবং শ্বশুর দুজনেই খুব ভালো কৃষক ছিলেন। তাই আমি বুঝি কৃষকের কষ্ট। আমার স্বামীকে সহযোগিতা করতে আমি নিজের হাতে ১০ হাজার বস্তায় আদা রোপন করেছি। আমরা যখন শুরু করি, তখন অনেকে অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু তবুও আমরা থেমে থাকিনি। আমাদের এই কৃষি উদ্যোগে অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সবাই আমাদের বাহবা দেয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মন জানান, ‘সখীপুর উপজেলা আদা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই অর্থবছরে প্রায় ১৯০ হেক্টর জমিতে আদা আবাদ হয়েছে এবং বস্তায় আদা চাষ হয়েছে ২০-২২ হাজার বস্তা। ফলন যদি ভালো হয়, কৃষকরা বস্তা প্রতি এক থেকে দেড় কেজি আদা পেতে পারে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১৯০ হেক্টরে দুই হাজার মেট্রিকটনের উপরে ফলন হতে পারে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে সখীপুর উপজেলায় অনেক কৃষকরা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষের সুবিধা ছত্রাকের আক্রমণসহ অন্যান্য রোগবালাই কম হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি