News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক  || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
আপডেট: ১৪:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে প্রাকৃতিক ৬ উপায়

ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে প্রাকৃতিক ৬ উপায়

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানীর বাতাস। তাই তো ঘরে ঢুকেই মাস্ক-ক্যাপ খুলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচি আমরা। 

কিন্তু আপনি কি জানেন? কেবল বাইরের নয় ঘরের বাতাসও হতে পারে দূষিত। আপনি বাইরে যে নিশ্বাস নেন, তার থেকে আপনার ঘরের ভেতরের বাতাস অনেক ক্ষেত্রে দুই থেকে পাঁচগুণ বেশি দূষিত এবং বিষাক্ত! 

আমরা নিজেদের শরীর নিয়মিত চেক আপ করাই, ওষুধ সেবন করি। অথচ দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ নিশ্বাস নেওয়ার বিষয়ে চরম অসচেতন। 

ঘরের ভেতরের বিভিন্ন উপাদান এবং আসবাবপত্র রয়েছে যা বাইরের বাতাস এবং এরসাথে মিশ্রিত জীবাণু ধরে রাখে। যেমন: ঘরে যে ফোম বা গদির ওপর ঘুমায় এবং শিশুদের যেসব নরম পাজামা পরিয়ে রাখি সেগুলো থেকেও ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক বায়ু নির্গত হতে পারে। 

ভারতের হিলিং টাচ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোজ কে হুজার মতে, বিষাক্ত নিশ্বাস নেওয়ার ফলে ফুসকুড়ি, কাশি, চোখে জ্বালা ছাড়াও হাঁপানির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ঘরে ২৪ ঘণ্টা মাস্ক পরে থেকে দূষিত বাতাস মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক কিছু উপায়ের মাধ্যমে ঘরের ভেতরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখা সম্ভব।

যেহেতু আমরা বেশিরভাগ সময় ঘরে এবং কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করি, তাই সেখানকার বাতাস বিশুদ্ধ রাখার প্রাকৃতিক কিছু উপায় জেনে নিতে পারি।

যেভাবে বিশুদ্ধ রাখবেন ঘরের বাতাস-

১. হাউসপ্ল্যান্ট

কিছু কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো মাঝারি সূর্যের আলোতে পালিত হয়, এসব গাছ ঘরের ভ্যাপসা ভাব, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনে সহায়তা করে। 

নাসার ‘ক্লিন এয়ার স্টাডি’ অনুসারে কিছু সাধারণ ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের বাড়িতে বিষাক্ত গ্যাস যেমন- ফর্মালডিহাইড, বেনজিন বা অ্যামোনিয়া থেকে শোষণ করে ঘরের বাতাসকে প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ করে।

নাসার পরীক্ষিত কিছু ইনডোর প্ল্যান্টসগুলো হলো:

স্নেক প্লান্ট

নাসার গবেষণায় এই ‘গার্ডেন মাম’ বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি অল্প খরচেই ঘরের টবে লাগানো যায়।

পিস লিলি

ঘরের মধ্যে জমে থাকা ভ্যাপসা ভাব, দুর্গন্ধ, আসবাবপত্র ও বিষাক্ত বায়বীয় পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রাখে এমন কিছু গাছের মধ্যে অন্যতম বায়ু পরিশোধক গাছ পিস লিলি। এই গাছটি মাঝারি সূর্যের আলো পছন্দ করে। 

অল্প আলোতেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। এর হলুদ পাতা বুঝিয়ে দেবে সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। এতে গ্রীষ্মে ফুটবে খুব চমৎকার সাদা ফুল। তবে বিড়াল, কুকুর আর বাচ্চাদের কাছে থেকে দূরে রাখুন এ গাছ। কারণ গলায় বা পেটে গেলে চুলকাবে।

স্পাইডার প্লান্ট

এটি কার্বন মনোক্সইড, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, চামড়ায় ও রাবার থেকে নির্গত দূষণ শোষণ করে। গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে এরপর পানি দিন। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দুরে রাখুন।

ব্যাম্বো পাম 

বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড পরিশোধন করার সবচেয়ে কার্যকরী গাছ হচ্ছে ব্যাম্বো পাম। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা এই গাছ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। ব্যাম্বো পাম বাতাস থেকে বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে। এটি দেখতে ছোট নারিকেল গাছের মত। আসবাপত্রের পাশে ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিন। আসবাপত্র থেকে নির্গত দূষণ শুষে নিবে। খুব বেশি পানি দিলে শিকড় পঁচে যেতে পারে। এছাড়াও পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্লান্ট

যে কোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে। আলো ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে, তেমন কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। আপনার ঘরের যেকোনো কোনায় এই লতানো গাছটি দূষণ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখবে। এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে।

অ্যালোভেরা

একটি দুর্দান্ত বাতাস বিশুদ্ধকারী প্ল্যান্টস। রান্না ঘরের পাশে ছোট বারান্দায় যেখানে রোদ আসে সেখানের জন্য একটি বাড়তি সংযোজন হতে পারে। কিচেনে রান্না করার জন্য উচ্চতাপমাত্রা থাকে। এই তাপমাত্রা কমানোর জন্য অ্যালোভেরা প্ল্যান্টস ৯০% ফর্মালডিহাইড ও বেনজিন দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। এছাড়াও বাতাসের বিষাক্ত ধূলিকণাগুলো নির্মূল করে বাতাসের গুনগত মান নিশ্চিত করে।

উইপিং ফিগ

ওয়েপিং ফিগার বা ফিকাস ট্রি নামে পরিচিত উইপিং ফিগ। নাসার স্টাডি অনুসারে, এই বাড়ির প্ল্যান্ট ইনডোর-এয়ার টক্সিন ফর্মালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে দক্ষতার সাথে সক্ষম।

রাবার প্ল্যান্ট

ফিকাস ইলাস্টিক (সবচেয়ে বেশি রাবার প্ল্যান্ট, রাবার ট্রি বা রাবার ট্রি গাছ হিসাবে পরিচিত) এটি একটি জনপ্রিয় হাউজপ্ল্যান্ট কারণ এর মোমের প্রলেপযুক্ত পাতার জন্যে। গৃহপালিত হাউজপ্ল্যান্ট হিসাবে রাবার গাছ ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা পর্যন্ত যে কোনও জায়গায় বৃদ্ধি পায়। রাবার প্ল্যান্ট তাদের অপ্রতিরোধ্য উচ্চতা এবং সুন্দর পাতার জন্য পরিচিত। 

২. কাঠকয়লা

বদ্ধ ঘরের টক্সিন নির্মূল করে অভ্যন্তরীণ বায়ু বিশুদ্ধ করার একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায় হলো অ্যাক্টিভেটেড কাঠকয়লা। এটি গন্ধহীন ও শোষণকারী হওয়ায় বাতাস থেকে টক্সিন নির্মূল করার জন্য বিস্ময়কর কাজ করে থাকে। বাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে বাতাসকে বিশুদ্ধ করার আরও একটি উপায় হলো বাঁশের কাঠকয়লা।

৩. সল্ট ল্যাম্প

হিলিং টাচ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোজ কে হুজার মতে, সল্ট ল্যাম্প জলীয় বাষ্পকে বাইরে টেনে নেয়। ফলে বদ্ধ ঘরে শ্বাসকষ্ট, ত্বক জ্বালাপোড়া, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও জীবাণু হ্রাস করে। সল্ট ল্যাম্প আপনি আপনার টেবিলেও রাখতে পারেন। এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। চালু থাকা অবস্থায় সল্ট ল্যাম্প বায়ু পরিশোধনের কাজ করে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এটি বন্ধ হয়ে গেলেও অনেক সময় ধরে বায়ু পরিশোধনের কাজ করে থাকে। 

৪. ক্যানডেল প্রজ্বলন

এক্ষেত্রে আপনি যদি ঘরে সুগন্ধযুক্ত মোমবাতি জ্বালাতে চান, তবে প্যারাফিন মোমবাতির ব্যাবহার পরিহার করতে হবে। বরং যেসব মোমবাতি বাতাস দূষণ পরিশোধন করে সেগুলো বেছে নিন। যেমন— বিসওয়াক্স ক্যানডেল। এটি ঘরে বিশুদ্ধ বাতাস আনার পাশাপাশি ধীরে ধীরে জ্বলে। এগুলো জ্বললেও ঘরে পোড়া গন্ধ বা ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় না। বরং বিসওয়াক্স ক্যানডেল থেকে একপ্রকার সুগন্ধ নির্গত হয় এবং ধূলিকণা থেকে সৃষ্ট অ্যাজমা সারাতে সহায়তা করে।

৫. বায়ু পরিশুদ্ধকরণ তেল

কিছু অপরিহার্য তেল রয়েছে, যেগুলো ঘরে রাখলে ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সেখানে বাঁচতে পারে না।

দারুচিনি, ওরেগানো, রোজমেরি, থাইম, বাতাবিলেবু, লবঙ্গ, টি-ট্রি ইত্যাদি ঘরে রাখলে ঘর ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া মুক্ত থাকে।

এসব তেলের একটি অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রণ ঘরে রাখলে তা ঘরকে জীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে এবং বায়ু বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। এই তেলগুলো সাবান ও ডিটারজেন্টেও ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনার ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।

৬. অভ্যন্তরীণ বায়ু চালাচল বৃদ্ধি

ঘরের মধ্যকার আর্দ্রতা কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভেন্টিলেশনের জন্য আউটার ফ্যান ব্যবহার করতে হবে। 

কক্ষের ভেতরে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে থাকে রান্নাঘরের ধোঁয়া। বিশেষ করে রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা থাকলে তা বায়ু দূষণে অন্যতম নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। রান্নাঘরের চুলা যেনো ঘরের আর্দ্রতা না বাড়াতে পারে সেজন্য চুলার ওপরে হিট সাকশন ব্যাবহার করা যেতে পারে। 

এমন কি গোসলের পর বাথরুমেও অতিরিক্ত আর্দ্রতার সৃষ্টি হয়। যা ঘরের ভেতরের বায়ু দূষণ করতে পারে। এজন্য বাথরুমেও আউটার পাখা ব্যবহার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বদ্ধ কক্ষের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্দ্রতা। ভেন্টিলেটর বা বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করতে পারলে কক্ষের ভেতরের আর্দ্রতার মাত্রা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। তবে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করার মানে এই নয় যে, ঘরের জানালাগুলো খুলে আপনি বাইরের দূষিত বাতাস কক্ষে প্রবেশ করান। বরং ঘরের ভেতরে যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়েছেন সেগুলো চক্রাকারে বাইরে বের করুন। এক্ষেত্রে আউটার পাখাগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়