খেজুর গুড়ের ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়ানোর অপেক্ষায় যশোর
ছবি: তরিকুল ইসলাম মিঠু/নিউজবাংলাদেশ
রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর এরই সঙ্গে চাষির ব্যস্ততা বাড়ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের কাজে। যশোরের মাঠে মাঠে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত আসলেই যশোরের গ্রামের বাতাসে ভেসে বেড়ায় রস আর খেজুর গুড়ের মন মাতানো ঘ্রাণ।
ইতিমধ্যে খেজুর গুড় জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে যশোর। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উঠান বৈঠক, গাছি সমাবেশ, খেজুরের গুড়ের মেলা ও ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা হয় প্রতি বছরে।
অল্পদিনের মধ্যে শীতের আবহে সকলের মন মাতিয়ে তুলবে মিষ্টি খেজুর রস ও গুড়ের ঘ্রাণ। কাক ডাকা ভোর থেকে চলবে রস সংগ্রহ। সন্ধ্যায় চলবে গাছ পরিচর্যার কাজ। চলতি মৌসুমে কিছুটা আগেই জেলার প্রান্তিক গাছিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এক সময় সন্ধ্যা নামলে গ্রামীণ পরিবেশ খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মত।
ভোর থেকে শুরু করে সারাবেলা যেন গাছিরা মেতে থাকতো রস জ্বাল দিয়ে পাতলা ঝোলাগুড়, দানা গুড় ও পাটালি তৈরির কাজে। নলেন গুড়ের সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন অবশ্যই রূপকথা মনে হবে। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ।
মঙ্গলবার যশোরের উপজেলার ইউনিয়নের ঘুনি এলাকায় গেলে চোখে পড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের মাথা প্রস্তুত করছেন।
এ সময় নিউজবাংলাদেশ এর সংবাদদাতার সঙ্গে কথা হয় গাছি নজরুলের সাথে। তিনি বলেন, এক সময়ে এ অঞ্চালে প্রচুর পরিমাণে খেঁজুর গাছ ছিল। শীত আসলেও খেঁজুর গাছ কাটা গাছিদের আনো গোনা থাকতো। থাকতো রস জ্বালোনোরও পূর্ব প্রস্তুতিও। কিন্তু ধীরে ধীরে এ অঞ্চালে খেঁজুর গাছ কত হওয়ায় এখন আর আগের মত এ কাজে যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তনের ফলেও এখন আর তীব্র শীতের মধ্যে গাছিরা গাছে উঠতে চায় না। ফলে দিন দিন খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহ কমে যাচ্ছে। যে সব গাছিরা গাছ কাটছে তারাও একান্ত নিজের প্রয়োজনে এ কাজ করছে।
ইসলমাইল নামে অপর আরেক গাছি জানান, আগে এ গ্রামে কম করে হলেও এক থেকে দেড়শ লোক খেঁজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করত। এখন সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন লোক গাছ কাটে। শীতের মধ্যে ভোর বেলা এখন আর কেউ খেঁজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করতে চায় না। যে কারণে বাজারে রসগুড়ের দাম বাড়ছে।
তিনি আরো জানান, শীতের সকালে খেঁজুর গাছে ওঠা অত্যন্ত কষ্ট। তাই এ বছর তিনি ১২টি খেঁজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছেন। কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে গুড় ও পাটালি তৈরি শুরু হবে। চলবে প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত।
রাধানগর গ্রামের গাছি আবু মুসা বলেন, শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার মহাউৎসব। শহর থেকে সকলে গ্রামের বাড়িতে আসে রস-গুড় খেতে। তবে নতুন করে কেউ আর খেজুর গাছ তোলা-কাটার কাজ করতে চাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এছাড়া খেজুর পাতা জ্বালানি কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন উপজেলাজুড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে।
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, যশোরের যশ খেজুরের রসঅ এ আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও পতিত জমিতে খেজুর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। খেজুর গুড় ইতিমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ পেশার সাথে জড়িত গাছিদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ মৌসুমেও গুড় মেলা করা হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি