চাঁদে মানুষ পাঠানোর নেপথ্যে যা ছিল রহস্য
৯০ বছর বয়সে চলে গেলেন অ্যাপোলো–১১ চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স। গতকাল ২৮ এপ্রিল এল তার মৃত্যুসংবাদ।
অ্যাপোলো-১১ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ১১০ ঘণ্টা পর, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের মাটিতে পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। সে সময় কলিন্স ছিলেন নভোচারীদের বহনকারী কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে। কলাম্বিয়া তখন চাঁদের কক্ষপথে ছিল।
অপর দুই নভোচারীর মতো তারকাখ্যাতি পাননি কলিন্স। তবে যে অভিযানের অংশ তিনি হয়েছেন, ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার জন্য সেটা যথেষ্ট। মার্কিন তো বটেই, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে অ্যাপোলো–১১ অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তবে ঠিক কী কারণে তাদের চাঁদে পাঠানো হয়েছিল?
অ্যাপোলো–১১ অভিযান ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলমান শীতল যুদ্ধের ফসল। মহাকাশ অভিযানেও তার প্রভাব পড়ে। দুই পরাশক্তিই চেয়েছিল মহাকাশে ‘প্রথম’ হতে। বিশেষ করে ১৯৫৭ সালে মহাশূন্যে সোভিয়েত উপগ্রহ স্পুটনিকের সফল উড্ডয়নের পর মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডি যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, বেশির ভাগ আমেরিকান ভেবেছিলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের লড়াইয়ে সোভিয়েতদের কাছে হেরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সে বছর ১২ এপ্রিল প্রথম মানুষ হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণে যান ইউরি গ্যাগারিন। সেটিও সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেকটি সাফল্য। আর চাপে পড়ে যান কেনেডি।
যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল চাঁদে মানুষের প্রথম অভিযান চালাতে। কারণ, এই ক্ষেত্রে সোভিয়েতদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া, চাঁদে নিরাপদে মানুষ অবতরণ করলে সেটি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো আশ্চর্য একটি ঘটনা তো বটেই।
১৯৬১ সালের ২৫ মে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে কেনেডি তার উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব পেশ করেন। জনসম্মুখে ঘোষণা দেওয়ার আগে তার প্রস্তাব নানামুখী বাধার মুখে পড়ে। তবে সেসব কাটিয়ে ওঠেন তিনি। ঠিক করা হলো, ওই দশক শেষ হওয়ার আগেই নিরাপদে চাঁদে মানুষের অবতরণ এবং পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। এরপর ১৯৬২ সালে কেনেডি তার বিখ্যাত সেই ভাষণ দিলেন। দেশের জনগণের উদ্দেশে বললেন, ‘আমরা ঠিক করেছি চাঁদে যাব।’
১৯৬৫ সালে চাঁদে মানুষবিহীন অভিযান চালায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এদিকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা অ্যাপোলো কর্মসূচির জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট প্রস্তাব করে। নানাভাবে কাজে যুক্ত হন প্রায় চার লাখ মানুষ। পুরো কর্মসূচির জন্য সে সময়ই খরচ হয় আড়াই হাজার কোটি ডলার।
অভিযানের জন্য তিন নভোচারী নির্বাচিত হন। বাজ অলড্রিন, নিল আর্মস্ট্রং আর মাইকেল কলিন্স। চন্দ্রতরী ইগল আর কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়া নিয়ে উড্ডয়ন করে স্যাটার্ন ফাইভ রকেট। আর্মস্ট্রং আর অলড্রিন চন্দ্রতরীতে করে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেন। চাঁদের কক্ষপথে কলাম্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন কলিন্স।
কিন্তু চাঁদেই কেন?
এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রই চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে। তবে রাশিয়া, জাপান, চীন, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, ইসরায়েল এবং ভারত চাঁদে অবতরণ কিংবা প্রদক্ষিণের জন্য রোবটযান পাঠিয়েছে। চাঁদে অভিযান চালানো মানে নিজেদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রদর্শন। সেটি একটি কারণ।
বাস্তবসম্মত কারণও ছিল। যেমন চাঁদের সম্পদ কাজে লাগানো। চাঁদের দুই মেরুতে পাওয়া বরফ কাজে লাগিয়ে চাঁদ থেকে অন্যান্য গ্রহে অভিযান চালানো যেতে পারে। বরফ থেকে পাওয়া হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নভোযানের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস