ঈদ সামনে রেখে কর্মব্যস্ত টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী
‘নদী চর খাল বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন।’ টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি পছন্দ নয়, এমন নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে কারখানা বন্ধ থাকায় থমকে গিয়েছিলো তাঁত শাড়ি তৈরির কাজ।
আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে টাঙ্গাইলের তাঁত মালিক শ্রমিকরা। আসন্ন রমজানের ঈদকে সামনে রেখে তারা নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে তাঁত পল্লীগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা তাঁত যন্ত্রগুলো অনেকেই মেরামত করছেন। এ ছাড়াও যোগাড় করছেন শাড়ি তৈরির সুতা, রংসহ বিভিন্ন উপকরন। তাঁতপল্লীগুলো ঘুরে দেখা যায় বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি।
বহুদিনের চেনা টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে তাঁতের শাড়ীর কদর ও সুনাম। জেলার কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর জুড়ে তাঁতের শাড়ী উৎপন্ন হলেও তাঁতপল্লী হিসেবে পরিচিত দেলদুয়ার উপজেলার চন্ডী, পাথরাইলের তাঁত সমৃদ্ধ এলাকাকে ঘিরে।
তাঁত বোর্ডের তথ্যমতে, টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও দেলদুয়ার উপজেলাগুলো হলো জেলার তাঁত প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। টাঙ্গাইলে তাঁত মালিকের সংখ্যা চার হাজার ১৫১ জন। তাঁত রয়েছে ৩৪ হাজার ৪০২টি। এসব তাঁতে মোট এক লাখ তিন হাজার ২০৬ জন তাঁত শ্রমিক সম্পৃক্ত। তাঁতপল্লীতে কেউ শাড়ী বুনেন, কেউ চরকায় সুঁতা কাটেন, কেউ কাপড়ের নকশার সুঁতা কাটেন। আবার সুঁতা রঙ করা, শুকানো, পাটি করা, তানার সুঁতা কাটা, ড্রাম থেকে ভিমে সুতা পেঁচানো, তানা সাজানো, মালা বা নকশার ডিজাইন তোলা, কাপড় ভাঁজ করা, পেটি করা এবং বাজারজাত ও আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকে এ পেশায় সম্পৃক্তরা।
তাঁত মালিক এবং শ্রমিকরা জানান, গত বছর করোনার সময় বছর জুড়েই তাঁতপল্লী বন্ধ ছিল। এমনকি গত ঈদ এবং বৈশাখীতেও বিক্রি হয়নি শাড়ি। প্রধান দুটি উৎসবে ব্যবসা করতে না পেরে আরো ধস নামে তাঁত শিল্পে। ধার-দেনা করে চলছে সংসার।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কর্মমুখর হয়ে উঠছে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীগুলো। বুকে অনেকটা আশা নিয়ে জীবনের তাগিদে আবারো তাঁত শাড়ী বুননের কাজ করছেন তাঁতীরা। বিগত সময়ের লোকসান কাটিয়ে নিতে এবার তারা লাভের আশার স্বপ্ন দেখছেন। তবে বিগত কয়েকদিনের করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা তাঁত সমিতির সাবেক সভাপতি ও পাথরাইলের শাড়ী ব্যবসায়ী রঘুনাথ বসাক বলেন, করোনায় প্রায় ১ বছর তাঁত বন্ধ ছিলো। তাঁতীরা করোনার ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠেতে পারেনি। তবে এবার আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে কিছু নতুন শাড়ীও তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি আসন্ন ঈদে তাঁতীরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাড়াতে পারবে। করোনার আগে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার তাঁত ছিলো। করোনার কারণে ১০ হাজার তাঁত কমে আনুমানিক এখন ৪০ হাজার তাঁত রয়েছে। বর্তমানে আনুমানিক ৮০ হাজার লোক এ পেশায় সম্পৃক্ত রয়েছে। করোনার আগে ১ লক্ষাধিক তাঁতী ছিলো। করোনাভাইরাসের কারণে তাঁতীরা পুরোপুরি কর্মহীন ছিলো। তিনি আরও বলেন, শাড়ী ব্যবসার জন্য বৈশাখী ও ঈদুল ফিতর দুটি প্রধান মৌসুম। গতবছর তাঁত শাড়ি বিক্রি হয়নি বিধায় এবার তাঁতীরা পর্যাপ্ত সংখ্যাক বিক্রি করার আশা করছেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো বর্তমানে করোনাভাইরাসের আক্রমণ বাড়ছে। যদি আবারো বন্ধ হয় তাহলে তাঁতীরা পথে বসার উপক্রম হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস