পুঁজিবাজারের অসুবিধাকারীদের প্রতি সরকার কঠোর
পুঁজিবাজারকে কেউ যদি ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার অসুবিধা আছে। এ বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর, কেউ এখানে অসুবিধা সৃষ্টি করলে সরকার সহ্য করবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
একইসঙ্গে বলেন, দুই বছরের মধ্য বড় ধরনের উত্থান পরিবর্তন পুঁজিবাজারে দেখতে পারবেন।
শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘ডায়ালগ অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি’শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সভায় সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম। সেমিনারটি আয়োজন করে ইআরএফ।
আমাদের দায়িত্ব নেবার সময় ক্যাপিটাল মার্কেটের সাইজ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা ছিল জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন সেই ক্যাপিটাল মার্কেটের সাইজ ৫ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে অনেক বড় উত্থান পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তখন আমরা শ্যালো মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসবো।
পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আর নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ে খেলতে পারবে না। কোন গ্রুপ করে হয়তো পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব, তবে সেটা করতে গেলে ধরা খাবে। এরপরও যদি সবাই একদিনে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। কিন্তু পুঁজিবাজারকে কেউ যদি ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার অসুবিধা আছে। এ বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর, কেউ এখানে অসুবিধা সৃষ্টি করলে সরকার সহ্য করবে না।
জাঙ্ক কোম্পানি সংস্কার করা হচ্ছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ম্যানেজমেন্ট বা মালিকের অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কোম্পানি ধ্বংস হয়। এজন্য আমরা প্রথমে পর্ষদ পুনর্গঠন করে কোম্পানি ঠিক করার উদ্যোগ নিচ্ছি। তাতে কাজ না হলে এক্সিটের ব্যবস্থা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ৯৯ কোম্পানির যথেষ্ট সম্পদ আছে।
পেনিক সৃষ্টি না করে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করছি জানিয়ে তিনি বলেন, ইনসাইডার ট্রেডিং করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সফটওয়্যারে ধরা পড়ে। তখন আমরা সংশ্লিষ্টদের ডেকে আনি। বিও হিসাব বন্ধ করে দেয়া, জরিমানার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। সবকিছুই এমন ভাবে করি, যাতে পুঁজিবাজারে এনিয়ে কোন পেনিক সৃষ্টি না হয়। আগে আমরা সবাইকে জানিয়ে বন্ধ, জরিমানা, শাস্তি দিয়েছি। কিন্তু এখন সেই ভাবে দিচ্ছি না। কারন এসব নিয়ে পুঁজিবাজারে পেনিক সৃষ্টি হয়। তাই প্রকাশ না করে অনেক সতর্ক হয়ে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করছি। যাতে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ কোয়ার্টারে মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলো ভালো করছে। সামনে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পেলেই মিউচুয়্যাল ফান্ড প্রতি তাদের বিশ্বাস বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে আস্থাও। সামনের দিনে সুকুকসহ অন্যান্য যেসব বন্ড বাজারে আসবে, সেখানে দেখবেন, বিদেশিদেরও অংশগ্রহন থাকবে। আশা করছি আগামীতে মিউচুয়াল ফান্ডে বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
সব ব্যাংকের পারফরম্যান্স এক হবে না এমন মন্তব্যে করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ক্যাপিটাল ও ইন্টারেস্ট রেট একেক রকম, আবার কারো কারেন্ট ব্যালেন্স বেশি, কারো কম, কারো এফডিআর রেট অনেক বেশি। বিভিন্ন কারণে একেক ব্যাংকের পারফরম্যান্স একেক রকম হবে। তার ওপর নন-পারফরমিং লোন রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়া সঠিক হবে না। অনেকগুলো ভেরিয়েবলের ওপর ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। তাই সম্মিলিতভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। তবে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। যেটা কোনোভাবেই অপেক্ষা করা যাবে না।
ভাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে করের ব্যবধান বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রস্তাব দিয়েছে বিএসইসি। তা না হলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না।
সেমিনারে বিএসইসির চেয়ারম্যান উদ্দ্যেশে শারমিন রিনভী বলেন, আমি জার্নালিজম অধ্যায়নরত অবস্থা শিখেছি তথ্য অবাধ প্রবাহ, প্রচারই প্রসার। তথ্য অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে রিপোর্টের স্বচ্চতা ঠিক থাকে। আমাদের তথ্যর স্বচ্ছতা ধরে রাখার চর্চা করতে হবে। একই সঙ্গে বলেন, আপনাদের তথ্য অবাধ প্রবাহের সাথে পুঁজিবাজারে সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসময় সাংবাদিকদের গবেষনার জন্য বিএসইসির কাছে বিশেষ সহায়তা চান তিনি।
আপনার কমিশন আসার পর বর্তমানে পুঁজিবাজার চাঙ্গা ভাব জানিয়ে তিনি বলেন, এই চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে আগত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার খুব সেনসিটিভ। সামান্য ভূল তথ্য প্রদানে প্যানিক তৈরি হয়। যেটি পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই পুঁজিবাজার রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে নিভূল রিপোর্ট করার ওপরে জোর দেন। এসময় ভূল রিপোর্ট করে প্যানিক সৃষ্টি না করার বিশেষ আহবান করেন তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/ডি