দেশে ফেরা প্রবাসীরা নতুন করে দেনায় জড়াচ্ছেন: আইওএম
মহামারির মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীরা পুরোনো ঋণ শোধ করতে নতুন করে ধারদেনায় জড়াচ্ছেন। তাই তাদের ঋণ আরও বাড়ছে। বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্য খাতে তাদের ব্যয় কমাতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২: নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টারনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে দ্বিতীয় দফায় জরিপটি করা হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। এর আগে উচ্চ অভিবাসনপ্রবণ ১২টি জেলায় গত মে মাসে আরেক দফা জরিপ করা হয়।
জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় টাকা ধার করা বা অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন এমন অভিবাসী ৫০ শতাংশ। বিদেশফেরত অর্ধেকের বেশি অভিবাসীরা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের এক লাখ টাকার ওপরে ঋণ আছে এবং ২৮ শতাংশ বলেছেন, তাদের ঋণ দুই লাখ টাকার ওপরে। ৫৮ শতাংশ অভিবাসী বলেছেন, তাদের ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের জুনের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে।
জরিপের ফলাফল বলছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে বিদেশফেরত অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ২০ ভাগের বেশি বেড়েছে। প্রথম ধাপের গবেষণায় এই হার ছিল ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশে। তাঁদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও ঋণ পরিশোধের বোঝা। তবে দ্বিতীয় ধাপে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ, যা আগের ধাপে ছিল ৭৪ শতাংশ। মূলত লকডাউন তুলে দেওয়া, সাধারণ কর্মকাণ্ড উন্মুক্ত হওয়া এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বেকারত্বের হার কমেছে। দেশে ফিরে তারা বিভিন্ন কাজে যুক্ত হচ্ছেন।
আইওএম বলছে, গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ৮৭৫ জন বিদেশফেরত অভিবাসী জরিপে অংশ নেন। প্রথম দফায় গত জুন মাসের জরিপেও তারা সবাই ছিলেন। প্রথম ধাপের জরিপের প্রতিবেদনে বিদেশফেরত অভিবাসীদের ৭০ শতাংশ তিন বেলা খেতে পারতেন, দ্বিতীয় ধাপে তা ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জরিপ বলছে, কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করতে চেয়েছেন ৬০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী। অভিবাসীরা বলেছেন, টাকা ধার করা, খরচ কমানো ও অর্থ সহায়তার ওপর তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, এই তথ্য অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ভবিষ্যতে সহায়তা প্রদানপ্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং করোনাভাইরাসের মতো ভবিষ্যৎ কোনো প্রাদুর্ভাব থেকে অভিবাসীদের সুরক্ষা দিতে সহযোগিতা করবে। আরও ভালো অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও ফিরে আসা অভিবাসীদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণে সরকারকে সহযোগিতা করতে আইওএম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন অ্যানালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)’ প্রকল্পের আওতায় জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনটি বলছে, ৮৭ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী আবার বিদেশে ফিরে যেতে চান। তাদের গন্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইতালি ও মালয়েশিয়া।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস