রোজায় ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নজরদারি
আসন্ন রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে মাঠ জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার।
টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিপণন সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হচ্ছে, পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরে চালের যৌক্তিক মূল্য ঠিক করতেও কাজ করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একটি যৌথ কমিটি।
বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যগুলোর ন্যায্য মূল্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে সম্প্রতি কয়েকটি পণ্যের দাম ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।”
এ বছর পেঁয়াজের বাজার ‘তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে পারাকে ‘নানামুখী কলাকৌশল ও পদক্ষেপের সুফল’ হিসাবে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের অভিজ্ঞতা অন্যান্য পণ্যেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এএইচএম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে।
“অচিরেই টিসিবি এসব পণ্য নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বাজার শুরু করবে। অনলাইন মার্কেটেও কিছু পণ্য বিক্রি হতে পারে।”
এ বছর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান এই অতিরিক্ত সচিব।
“গত সপ্তাহে আমরা ঢাকার মৌলভীবাজারে সারাদেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারদের প্রতিনিধিদের সাথে বসেছি। সব আমদানিকারকদের নিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, নতুন একটি অ্যাসোসিয়েশন করার জন্য, যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই অ্যাসোসিয়েশন লিডারদের ডেকে কথা বলতে পারে।
“আবার আমরা চাইলে আমদানি পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র ও আমদানি মূল্য তাদের কাছ থেকে জানতে পারব। অতি দ্রুত এই অ্যাসোসিয়েশেন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে মন্ত্রণালয়।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হতে পারে। রোজায় কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে বলে প্রতি বছরই এ সময়টায় সরকারকে বাড়তি নজরদারি করতে হয়।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে এ মুহূর্তে আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মজুদ নিয়ে সুলভ মূল্যের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চলমান।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মত।
সারাবছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়।
সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মত। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।
বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে।
এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ মজুদ সক্ষমতা নিয়ে রোজার আগে মাঠে নামছেন তারা। আরও কিছু পণ্যের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আগামী মার্চের শুরু থেকেই বাজারে পণ্য নামানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
“প্রতি বছর আমরা রোজা শুরুর কিছুদিন আগে ট্রাক সেল শুরু করি। কিন্তু এবার শুরু করছি মার্চের শুরু থেকে। আমাদের মজুদ সক্ষমতা বেড়েছে, বাজারে এর প্রভাব রাখার জন্যই এ উদ্যোগ।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি