News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২ আগস্ট ২০১৯
আপডেট: ১৭:৪৫, ৫ নভেম্বর ২০২০

মুর্শিদাবাদে নজরুলের ভাস্কর্য উন্মোচনে মিললো দুই বাংলা

মুর্শিদাবাদে নজরুলের ভাস্কর্য উন্মোচনে মিললো দুই বাংলা

১৮ জুন ১৯২৩। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য রাজদ্রোহের অভিযোগে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দণ্ডিত কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হুগলী জেল থেকে আনা হল মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে। এ জেলে বসেই কবি লিখে ফেললেন ‘সত্যের আহ্বান’ এর মতো কালজয়ী কবিতা। জীবদ্দশায় বহুবার কবির পূণ্য পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে এই জনপদ। বিদ্রোহী ও মানবতাবাদী এই কবির মহাপ্রয়াণের চার দশক পর কবিস্মৃতি বিজড়িত সেই জনপদেই ফের উড়লো তাঁর ‘বিজয়কেতন’।

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় সম্প্রতি সাড়ম্বরে উন্মোচিত হলো কবির পূর্ণায়ব ভাস্কর্য। দু’দিন ব্যাপি বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবির প্রশস্তিতে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় অধিবাসীসহ দুই বাংলার নজরুলপ্রেমীরা। আয়োজনে গীত হয় নজরুলের অবিনাশী বহু গান ও কালজয়ী সব কবিতার আবৃত্তি। হাজারো ভক্তের ভালোবাসা ও বন্দনায় সিক্ত নজরুল ও তাঁর অমর সাহিত্য। 

আয়োজনে নজরুল পরিবারের সদস্যসহ দুই বাংলার নজরুলপ্রেমীদের মিলিতকণ্ঠে এই আহ্বান ধ্বনিত হয় যে, নজরুল তাঁর সমকালে প্রাসঙ্গিক ছিলেন-এই সময়ে এসে তিনি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

নন্দগোপাল ফাউন্ডেশন ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার’র উদ্যোগে নজরুল ভাস্কর্যের উন্মোচন ও দুদিনব্যাপি আয়োজনে হরিহরপাড়ার গোপালনগর  মেতে উঠে সাংস্কৃতিক উৎসবে। গত ২৭ জুলাই (২০১৯) শনিববার উৎসবের উদ্বোধনীতে নজরুল ভাস্কর্যের উন্মোচন করেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম। এসময় উপস্থিত ছিলেন-কবির দৌহিত্র-দৌহিত্রী সুবর্ণ কাজী, সোনালী কাজী, নন্দগোপাল ফাউন্ডেশর ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার’র উপদেষ্টা মদন সরকার, বিশিষ্ট সংগঠক ও সমাজসেবী নন্দগোপাল ব্যানার্জী, গ্লোবাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফর হিস্ট্রি, হেরিটেজ অ্যান্ড ফ্রিডম স্ট্রাগল (জিজেএ)’র সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনরা।

হরিহরপাড়া এ কে খান কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ  ডঃ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রথমদিনের নজরুল সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও যোগ দেন-মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলা শাসক সুদীপ্ত পোড়েল, হরিহরপাড়ার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক পূর্ণেন্দু স্যানালসহ অন্যরা। এদিন দুই দৌহিত্র সুবর্ণ কাজী ও সোনালী কাজী দাদুর গানে সবাইকে মোহিত করেন। আবৃত্তি করেন নিবেদিতা চৌধুরী।

রোববার ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে অংশ নেন বাংলাদেশের নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান, সরোজিনী নাইডু কলেজের অধ্যাপক আজিজুল বিশ্বাস, কাচড়াপাড়া গভমেন্ট কলেজের অধ্যাপক কল্যাণ সরকার, অগ্নিবীণার সাধারণ সম্পাদক রবিন  মুখার্জী, বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী করিম সাহাবুদ্দিন, শিল্পী মঞ্জুষা চক্রবর্তী, সুকন্যা কর্মকার, রবিউল আলম, পিনাকী সরকার প্রমুখ।

আয়োজনে উপস্থিত নজরুল অনুরাগীরা স্থানীয় গোপালনগর মোড়কে নজরুলতীর্থ হিসেবে নামকরণ করেন। একই সঙ্গে সরকারি অনুমোদনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি আবেদন প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আয়োজন উপলক্ষে ‘অগ্নিবাণী’ নামে একটি বিশেষ সংকলনের মোড়কও উন্মোচন করেন অতিথিরা। সার্বিকভাবে এই আয়োজন সফল করতে ভূমিকা রাখেন নন্দগোপাল ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মদন সরকার, সভাপতি সুহাস অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম, সদস্য আবদুস সালাম, নিয়ামত হোসেন, সাংস্কৃতিককর্মী আবদুর রহমান, সাইদুল আনসারী, রুস্তম চৌধুরী, নার্গিস তানজিমা, টুটুল মন্ডলসহ অন্যারা।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রখ্যাত ভাস্কর চিন্তামনি করের ছাত্র সরগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ বিশ্বময়ানন্দের তত্ত্বাবধানে নির্জনদে নান্দনিক এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। সরকারি আনুকূল্য ছাড়া সম্পূর্ণ নজরুলপ্রেমী সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় কবির পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দুই বাংলা তথা ভারতবর্ষে নজরুলচর্চায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।

 

নিউজবাংলাদেশ.কম/ডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়