News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:২০, ২৫ মে ২০১৯
আপডেট: ০৮:৪৫, ১ মার্চ ২০২০

৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বগুড়া যুবলীগের সাবেক নেতা গ্রেপ্তার

বগুড়া সংবাদদাতা

৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বগুড়া যুবলীগের সাবেক নেতা গ্রেপ্তার

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বগুড়া শাখা থেকে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলায় বগুড়ার যুবলীগের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মাকছুদুল আলম। তিনি বগুড়ার মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। মাকছুদুল আলম বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলমের ভাই। বগুড়া যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় মুঠোফোনে আজ বলেন, মাকছুদুল আলম তার কমিটির (বর্তমান কমিটির আগের কমিটি) সদস্য ছিলেন।

গত শুক্রবার রাতে শহরের নামাজগড় এলাকার প্রত্যাশা হাউজিং থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ আত্মসাৎ মামলায় আসামি মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মাকছুদুল আলমকে শহরের নামাজগড়ের বাসা থেকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সকালে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল একই মামলায় বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মান্নান আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। মান্না বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।

৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মামলার অভিযোগপত্রে নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত করে দুদক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত ও অপরাধী চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যাংকের বগুড়া শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক (সাময়িক বরখাস্ত) রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতিকুল কবির, বগুড়া শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ওই সময়ের হিসাবপত্র খতিয়ে দেখে, অর্থ আত্মসাৎকারীরা এই শাখার বিনিয়োগসুবিধা গ্রহণকারী গ্রাহক মেসার্স আবু বকর সিদ্দিক ও মেসার্স আবদুল কুদ্দুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি করে যোগসাজশকারীদের ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থানান্তর করেন। ওই টাকা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ জালিয়াত চক্র আত্মসাৎ করে। ব্যাংকের অনুসন্ধানে ১৯টি ভুয়া হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো হলো মেসার্স এমএম ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আকতার হোসেন ১০ কোটি ১০ লাখ, মেসার্স রিমা ফ্লাওয়ার মিলসের মো. জহুরুল হক ১০ কোটি ১৮ লাখ, মেসার্স নিলয় এন্টারপ্রাইজের মো. এনামুল হক প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ, মেসার্স রুমা ট্রেডার্সের আইরিন হোসাইন ১৫ লাখ, মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মাকছুদুল আলম প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ, মেসার্স ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের ফিরোজ আহম্মেদের ৩ কোটি ৪২ লাখ, মেসার্স অতিথি ফিলিং স্টেশনের জাহাঙ্গীর আলম ৫ লাখ, মেসার্স হাসান কনস্ট্রাকশনের মো. ইমরুল ২৩ লাখ এবং মেসার্স জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মো. জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া মেসার্স হীরা মোটরসের নিখিল রঞ্জন কর্মকার ৬০ লাখ, নিশিতা এন্টারপ্রাইজের নাহিদুজ্জামান ৩০ লাখ, মেসার্স আবদুল মতিন ট্রেডার্সের আবদুল মতিন ২০ লাখ, মো. আখতার হোসেন ১৪ লাখ, মেসার্স আর রহমান এন্টারপ্রাইজের সোহেল রানা ১৪ লাখ, মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের মো. মাহবুবুর রহমান ১৩ লাখ, মো. রফিকুল ইসলাম ৩ লাখ, মো. ফেরদৌস আলম ২০ লাখ, আরিফুল কবির ৩২ লাখ এবং মাসুদ আহমেদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা তদন্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঞা। পরে এ মামলার তদন্ত করেন উপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক। ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনি আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়