বিজেপিতে বিজয়োৎসবের প্রস্তুতি

কলকাতায় বিজেপি সমর্থকদের উল্লাস
ভারতে স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১২টার সময় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একাই সারা দেশে ২৯৪টি আসনে এগিয়ে আছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি একাই পেয়েছিল ২৮২টি আসন, যা গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসনের চেয়েও ১০টি বেশি।
কোনো দল ভারতে এককভাবে গরিষ্ঠতা পাচ্ছে, সে ঘটনা তার আগের তিন দশকে ঘটেনি। কিন্তু এবারের ‘আর্লি ট্রেন্ড’ যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে বিজেপি আগেরবারের ফলকেও ছাপিয়ে যাবে সেই লক্ষণ স্পষ্ট।
নোটবন্দী, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের বেহাল দশা, গ্রামীণ ভারত ও কৃষকদের দুর্দশা– সব ধরনের সমালোচনাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি এই বিপুল জয়ের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় উৎসবের প্রস্তুতি চলছে দলটির কার্যালয়ে।
কতটা কাজে এল ‘প্রিয়াঙ্কা ফ্যাক্টর’?
বিজেপি কার্যত জিততে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কোন কাজে এল না?
ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়ার পর থেকেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন মূলত ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে।
তিনি প্রচার চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, নোটবন্দী বা ডি-মনিটাইজেশান এবং কৃষকদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করার নীতির বিরুদ্ধে।
তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন গাড়িতে, ট্রাকে, এমনকী নৌকায়। অনেক রোডশোতে অংশ নিয়েছেন। অজস্র জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। সমর্থকদের সঙ্গে হাসিমুখে অভিবাদন বিনিময় করেছেন, হাত নেড়েছেন প্রিয়াঙ্কা। করমর্দন করেছেন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে। সেলফিতে পোজ দিয়েছেন প্রচুর। সমর্থকদের বাচ্চাদের কোলে বসিয়ে ছবি তুলেছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অবশ্য লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করেননি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে তিনি যেখানে গেছেন যা করেছেন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিপুলভাবে উৎসাহী ছিল।
মন্দিরে, মাজারে যেখানে তিনি গেছেন, তা মূল সংবাদে সবসময় স্থান পেয়েছে। তার মা সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী এলাকা রায়বেরিলিতে সাপুড়েদের গ্রামে যখন তিনি গেছেন তখন সাপ হাতে তার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। মধ্যভারতে তাকে দেখা গিয়েছিল বেড়া টপকে জনতার মাঝে চলে যেতে, যখন তার নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে ধরতে দৌড় দেয়।
কিন্তু এত কিছুর পর, দেখে মনে হচ্ছে কংগ্রেস পার্টির ভাগ্য পরিবর্তনে তার সব উদ্যোগ কার্যত বিফল হয়েছে।
দিল্লিতে ভরাডুবি, চুপচাপ আম আদমী পার্টির কার্যালয়
দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ জানাচ্ছেন, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে সাতটি সংসদীয় আসন আছে, তার সবগুলোতেই এই মুহুর্তে এগিয়ে আছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, স্থানীয় সময় বেলা ১১টা নাগাদ দিল্লিতে বিজেপি প্রার্থীরা কেউ ২০ হাজার, কেউ বা লক্ষাধিক ভোটে এগিয়ে ছিলেন।
দিল্লির ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের এবার আসন সমঝোতা হয়নি, বিজেপি খুব ভালোভাবেই যার ফায়দা তুলতে পারছে বলে এখন দেখা যাচ্ছে।
সমঝোতা না হওয়ার জন্য আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী পরস্পরকে প্রকাশ্যেই দোষারোপ করেছেন।
দোষটা যারই হোক, দিল্লিতে ওই দুই দলের খেয়োখেয়ির রাজনৈতিক লাভ বিজেপিই পাচ্ছে।
ওদিকে বিবিসির দিব্যা আরিয়ার টুইটে দেখা যাচ্ছে দলটির কার্যালয়টিতে এখন সুনসান নীরবতা।
উত্তর প্রদেশেও অনেক এগিয়ে বিজেপি
উত্তর প্রদেশে অন্তত পঞ্চাশটি আসনে এগিয়ে আছে বিজেপি। আঞ্চলিক সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আগের নির্বাচনে ৮০টির মধ্যে ৭১টিই জিতেছিল বিজেপি। এবার বিজেপির আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিরা এক হয়েছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি তাদের। বরং মোদির জনপ্রিয়তা ভালোভাবেই তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে।
পশ্চিমবঙ্গে মিলছে অমিত শাহর পূর্বাভাস?
কলকাতা থেকে অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ২৪টিতে এগিয়ে থাকলেও ১৭টি আসনে বিজেপির এগিয়ে থাকা ওই রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
বিজেপি নেতারা এধরনের ফলাফল সম্পর্কে আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিল। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তার দল পশ্চিমবঙ্গে ২৩টি আসন পাবে।
তবে তৃণমূল এবং বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাদের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছিলেন। এখন ট্রেণ্ড দেখে মনে হচ্ছে বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে দেবার মত নয়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই উত্থানে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
বিজেপি দফতরে উৎসবের প্রস্তুতি
বিজেপি দলীয় সূত্রে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, ভোটের ফল ঘোষণা শুরু হওয়ার আগেই সারা দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে আজ দিল্লিতে দলের সদর দফতরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাজধানীর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির নতুন দলীয় সদর দফতরে তারা এদিন সন্ধ্যায় এক ‘বিজয় সমাবেশে’ যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেখানে সামিল হতে পারেন। ওই সমাবেশে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে দলের পক্ষে অভিনন্দন জানানো হতে পারে।
বিজেপির নবনির্বাচিত এমপিদেরও বলা হয়েছে, তারা যেন ২৫ মে-র মধ্যেই দিল্লিতে চলে আসেন।
অর্থাৎ, ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বিজেপি তাদের বিজয়োৎসবের আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ