কুটি মুনসুর হাসপাতালে, মরণোত্তর পুরস্কার চান না!
ঢাকা: তুমুল জনপ্রিয় লোকগীতি ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম নারে জরিনা’সহ অজস্র লোকজ গানের প্রবাদপুরুষ কুটি মুনসুর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত নয় জুলাই (বৃহস্পতিবার) উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। একইসঙ্গে তিনি ফুসফুসের জটিলতায়ও ভুগছেন।
বর্তমানে ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ড. আশরাফুদ্দীন চোধুরীর তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
কুটি মুনসুরের জামাতা শাহাবুদ্দিন দোলন নিউজবাংলাদেশকে জানান, “বাংলা লোকজ গানকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। সততা আর নিষ্ঠা দিয়ে দিনের পর দিন লোকজ গানকে ভালোবেসে গেছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি অর্থ বা পতিপত্তি চাননি। দেশের বাংলা গানের জন্য তিনি এতো অবদান রাখলেও কয়েকটি পুরষ্কার ছাড়া সরকার এই গুণী শিল্পীর কোনো খবরই রাখেন না।”
তিনি বলেন, “ কুটি মুনসুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, রথীন্দ্রনাথ রায়, নীনা হামিদসহ অনেকেই তার গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। অথচ এখন আর কেউই তার কোনো খোঁজখবর রাখেন না। এতে তিনি খুব মনোকষ্ট পেয়েছেন। গভীর কষ্ট ও ক্ষোভ থেকে তিনি বলেছেন- “বেঁচে থাকতে যেহেতু কোনো মূল্যায়ন হলো না, তাই আমি মারা যাবার পর কোনো মরোনোত্তর পুরষ্কার দেওয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো না।” দেশবাসীর কাছে কুটি মনসুরের আরোগ্য কামনায় দোয়া চেয়েছেন তিনি।
হাসপাতালে কুটি মুনসুরের যথাযথ চিকিৎসাব্যয় সংকুলান করাও তার একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তার জামাতা দোলন।
লোকজ গানের জগতে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি কুটি মনসুর ১৯২৬ সালে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানার লোহারটেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবার নিয়ে বর্তমানে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ই ব্লকে ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন তিনি।
কুটি মুনসুর একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। কিন্তু এখন আর কেউ তার খোঁজখবর রাখেন না। ৮৯ বছর বয়সী অভিমানী এই মানুষটির দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায় নিভৃতে।
হয়তো শেষ বেলায় তার এমন পরিণতির কথা আঁচ করতে পেরেই এই গুণী শিল্পী লিখেছিলেন-
‘আইলাম আর গেলাম/পাইলাম আর খাইলাম/
ভবে দেখলাম শুনলাম/কিছুই বুঝলাম না।...’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম