News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৪ মে ২০১৯
আপডেট: ০৭:১৬, ৫ অক্টোবর ২০২০

হাইপেশিয়া একজন প্রখ্যাত নারী গণিতজ্ঞ

নারী ডেস্ক

হাইপেশিয়া একজন প্রখ্যাত নারী গণিতজ্ঞ

হাইপেশিয়া বিখ্যাত মিশরীয় নব্য প্লেটোবাদী দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম উল্লেখযোগ্য গণিতজ্ঞ। তিনি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আলেক্সান্দ্রিয়ান প্যাগানও ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে তার সাফল্য উল্লেখ করার মত। হাইপেশিয়ার পিতার নাম থিওন। তিনিও একজন খ্যাতিমান গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক ছিলেন এবং হাইপেশিয়াকে মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিতকরণে তার ভূমিকাই ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

যাহোক ৪০০ সালের দিকে হাইপেশিয়া আলেক্সান্দ্রিয়ার নব্য প্লেটোবাদী দর্শনধারার মূল ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং খ্যাতির চরম শিখরে আরোহণ করেন। তার মধ্যে অসাধারণ বাগ্মীতা, বিনয় এবং সৌন্দর্য্যের সার্থক সম্মিলন ঘটেছিল। এজন্য তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীর আকর্ষণ লাভ করতে সমর্থ হন। তাদের মধ্যে একজন হলেন সিরিনের সাইনেসিয়াস (Synesius) যিনি পরবর্তীতে (৪১০ খ্রিস্টাব্দে) টলেমাইস নামক অঞ্চলের বিশপ হন। হাইপেশিয়ার কাছে সাইনেসিয়াসের লেখা কিছু চিঠি এখনও বর্তমান রয়েছে। তার কোন ছবি পাওয়া যায়নি, তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর লেখক ও সাহিত্যিকেরা তাকে সৌন্দর্য্যে দেবী এথেনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

হাইপেশিয়ার রূপ-সৌন্দর্য তার দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে একীভূত হয়ে তাকে আপূর্ব মহিমা দান করেছিল। তাই তৎকালীন যুগে এতোটা বিখ্যাত হয়েছিলেন। এর সাথে তার করুণ মৃত্যু যোগ হয়ে তাকে অমরত্ব দান করেছে। তার জীবন তাই অনেক লেখককেই উৎসাহিত করেছে। তার জীবনী নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল চার্লস কিংসলির লেখা "হাইপেশিয়া"। তিনি শিক্ষা এবং বিজ্ঞানকে সঠিক উপমার মাধ্যমে প্রতিকায়িত করেন। তৎকালীন সময়ে এ ধরণের শিক্ষাকে প্যাগান রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সাথে একীভূত মনে করা হত এবং এর ফলে জ্ঞানের বিকাশের পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়, আর এ কারণেই তাকে অনেক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়।

তার মৃত্যুর সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হলে ইতিহাসের বেশকিছু ঘটনার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সম্রাট থিওডোসিয়াস ১৩৮০ সালে প্যাগানবাদ এবং অরিয়ানবাদের বিরুদ্ধে একটি অসহিষ্ণুতা নীতির সূচনা ঘটান। তিনি ৩৭৯ থেকে ৩৯২ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন এবং এরপর থেকে ৩৯৫ সাল পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। ৩৯১ সালে তিনি আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ থিওফিলাসের পত্রের জবাবে মিশরের ধর্মীয় সংস্থানসমূহকে ধ্বংস করে দেয়ার অনুমতি প্রদান করেন। এর পরপরই খ্রিস্টান জনতা সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে আলেক্সান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার এবং সারাপিস মন্দির সহ অন্যান্য প্যাগান সৌধগুলো ধ্বংস করে দেয়।

৩৯৩ সালে আইনসভার আইনের মাধ্যমে এ ধরণের স্থাপনা বিশেষ করে ইহুদী মন্দির ধ্বংসে আক্রমণাত্মক কার্যাবলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু ৪১২ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ার ঊর্ধ্বতন যাজক হিসেবে সিরিলের ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো শুরু হয়। ৪১৪ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ায় ইহুদী বিতারণের সূচনার মাধ্যমে বিপর্যয়ের ঘনঘটা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৪১৫ সালে একদল ধর্মোন্মাদ খৃস্টান জনতার হাতে হাইপেশিয়া নিহত হন। বর্ণনামতে রথে করে ফেরার পথে উন্মত্ত জনতা তার উপর হামলা করে এবং হত্যার পর তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। অনেক বিশেষজ্ঞই তার মৃত্যুকে প্রাচীন আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়