খুলনায় অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি ইমুর খামার
 
									ইমু পাখি (ফাইল ফটো)
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি ‘ইমু’র খামার করা হয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে নয় সামগ্রিকভাবে বাণিজ্যিকীকরণ তথা বেকারদের নয়া কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় দুইশ ইমু পাখি এখন এ অঞ্চলের একটি মডেল। এখানকার প্রতিটি ঘরে ইমু পাখিকে জনপ্রিয় করে তোলাও হচ্ছে উদ্যোক্তার স্বপ্ন।
খুলনা মহনগরী থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বটিয়াঘাটা সদরে কিসমত ফুলতলা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইমু পাখির খামার। রাস্তার পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা এক বিঘা খোলা জায়গায় করা হয়েছে এ খামার। এটি যেন মরু উদ্যান। খামারের একপাশে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রশস্ত একটি পুকুরও রয়েছে। চারপাশে রয়েছে নেটের বেড়া। খোলা জায়গায় এ খামারটি গড়ে ওঠায় প্রতিদিন ভিড় করছে বহু দর্শনার্থী।
খামারের পূর্ব পাশেই কাজিবাছা নদী। খামার থেকে যার দূরত্ব ৫০ গজ। এই খামারকে ঘিরেই আশপাশ এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন। এটার উদ্যোক্তাও একজন সাদা মনের মানুষ বলে খ্যাত।
ইমু পাখি উড়তে পারে না। এরা খুবই নিরীহ প্রকৃতির। মুরগির মতো এরা দলবদ্ধ হয়ে মাঠে চরে বেড়ায় এবং সেই সাথে ঘাস, পাতা, নুড়ি পাথর খেয়ে থাকে। এরা চরম ঠাণ্ডা ও চরম গরমের মধ্যে সহজেই অভিযোজিত হতে পারে। বাংলাদেশের তাপমাত্রায় ইমু পাখির কোনো সমস্যা হয় না। একটা ইমু পাখি সাধারণত এক থেকে দেড় বছর বয়সে শারীরিক পূর্ণতা লাভ করে। ২৫ বছর পর্যন্ত প্রজনন ক্ষমতা থাকে। ২০-২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
ইমু পাখি ৫-৬ ফুট উঁচু হয়। প্রতিটির ওজন ৪০-৬০ কেজি হয়ে থাকে। একটি স্ত্রী ইমু পাখি দেড় থেকে দুই বছর বয়সে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ এই ছয় মাস ডিম দেয়। এরা বছরে ২৫-৩৫টা পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।
ইমু পাখির ডিম সবুজ বর্ণের এবং আকারে মুরগির ডিম থেকে ১০-১২ গুণ বড় হয়। প্রজননকালে এরা তিন থেকে পাঁচ দিন অন্তর অন্তর ডিম পাড়ে। জন্ম নেয়ার পর ছানা হালকা বাদামীর ওপর রেখা থাকে। চার মাস বয়সের পর এর গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করে। এক বছর বয়সের পর এর গায়ের রঙ বাদামীর ওপর কিছু নিলাভ সবুজ পালক থাকে। দেড় বছর পর গায়ের রঙ বাদামী বর্ণের হয়ে যায়।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ইমুকে জনপ্রিয় করতে খামারটি পরীক্ষামূলকভাবে গড়ে তুলেছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম খান। তিনি জানান, প্রতি জোড়া ১৬ হাজার টাকা দরে ক্রয় করেন। প্রথমে ২০০টি ইমু পাখির বাচ্চা এবং ১২টি উট পাখির বাচ্চা কেনেন। তখন প্রতিটি ইমুর ওজন ছিল ৬শ-৭শ গ্রাম। এখন প্রতিটির ওজন ৪০-৫০ কেজি। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে না পেরে ১০টি উট পাখি মারা গেছে। কিন্তু ইমু পাখি জীবিত রয়েছে ১৯০টি।
ইমুর মাংস বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। কারণ এর মাংস ৯৮ ভাগ পর্যন্ত চর্বিমুক্ত। এর চামড়ার নিচে একটি চর্বির আস্তরণ রয়েছে। যা দিয়ে মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়। বাংলাদেশের পরিবেশে ইমুর মৃত্যুহার খুবই কম।
তিনি আশা করেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে ইমুর খামার জনপ্রিয়তা পাবে এবং গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে এ পাখির খামার হবে, বেকার নারী-পুরুষরা স্বাবলম্বী হবে।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবাল বলেন, “দাপ্তরিক কাজে দাকোপ যাওয়ার পথে ইমু পাখির এই খামারটি চোখে পড়েছিল। উড়তে অক্ষম ইমুকে এভাবে পালন করা যায় আগে জানা ছিল না।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম কুমার হালদার জানান, ইমু পাখির মাংস বেশ সুস্বাদু। এর মাংস কোলেস্টেরল ফ্রি। ইমুর মাংস বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এর মাংস ৯৮ ভাগ পর্যন্ত চর্বিমুক্ত। এর মৃত্যুহার টার্কি, ব্রয়লারের থেকে অনেক কম। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ইমুর খামার বেশ সম্ভাবনাময়। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুশান্ত কুমার রায় জানান, এটি সম্ভাবনাময় পাখি এবং এর মাংস সুস্বাদু।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ






































