ঢাকা: সরকারি সংস্থাগুলোর নীরবতার সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যবসায় সরকারের আইনগত বাধা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সূত্রে জানা যায়।
কোয়াবের তথ্য অনুযায়ী, ডিটিএইচ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চুটিয়ে ব্যবসা করে আসায় কোয়াব নড়েচড়ে বসে। টাটা স্কাই ডায়লগ টিভি, সান ডিরেক্ট, ডিশ টিভি, ভিডিও কন, এয়ারটেল ডিটিএইচ বাণিজ্য করছে বলে জানা গেছে। শুধু ভারতীয় ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের জন্য ডিটিএইচ প্রযোজ্য হলে সীমান্ত হয়ে ডিটিএইচ বক্স বাংলাদেশে আনছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা।
কোয়াবের তথ্যে বলা হয়, তিন বছর আগ থেকেই অবৈধ ডিটিএইচ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় বাংলাদেশে। একটি অসাধু চক্র প্রথমে রাজধানীকেন্দ্রিক অভিজাত এলাকায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। পরে তারা ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, যশোরসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। তৈরি করা হয় পাড়া-মহল্লা অ্যাজেন্ট। বর্তমানে ডিটিএইচের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন রেট ৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন চ্যানেল দেখা যাবে ১৭০টি। মাসিক চার্জ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। টাটা স্কাইয়ের এইচডি ডিটিএইচের ক্ষেত্রে রেট নেয়া হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। মাসিক চার্জ ৮শ’ থেকে ১২শ’। চ্যানেল দেখা যাবে ২২৫টি। আর এইচডি প্লাসের ক্ষেত্রে ১৩ হাজার ৫শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। এই অপশনে ২২৫টি চ্যানেল দেখা যাবে। মাসিক চার্জ এখানেও ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। কোনো কোনো সময় চ্যানেল কম দেখার ওপর মাসিক চার্জ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ টেলিফোনে নিউজবাংলাদেশ.কমকে বলেন, “দেশীয় চলচ্চিত্র যেভাবে মার খেয়েছে, সেভাবে দেশীয় ক্যাবল অপারেটরদের বাণিজ্য ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা বাংলাদেশে চোরাইপথে ডিটিএইচ বক্স এনে ঘরে ঘরে অবৈধভাবে ব্যবসা করলেও সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ বসে আছে। এ ব্যবসা বন্ধে আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়েছি। তথ্য, স্বরাষ্ট্র,বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরে প্রায় ৫ লাখ ডলার অবৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে।”
কোয়াবের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামরুল আলম শামীম নিউজবাংলাদেশেকে জানান, “ডিটিএইচ প্রযুক্তি হচ্ছে ডিশ অ্যান্টেনার আধুনিক সংস্করণ। এর ব্যবহারে স্যাটেলাইট থেকে চ্যানেল একবার ডাউনলিংক করে আবার তা পুনরায় স্যাটেলাইটে ফেরত পাঠানো হয় যা আবার ডিটিএইচে ফিরে আসে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যাবল ছাড়াই পৃথবীর বিভিন্ন দেশের চ্যানেল দেখা যাচ্ছে। এখানে ৩শ থেকে ৪শ চ্যানেল দেখার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ টিভি দর্শক ডিটিএইচে টিভি অনুষ্ঠান দেখছে অবৈধভাবে।”
কামরুল আলম শামীম নিউজবাংলাদেশেকে আরো জানান, সম্প্রতি সরকার দেশে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এই ডিটিএইচ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে বলে জেনেছেন। এদের একটি হলো বেক্সিমকো এবং অপরটিহলো বেঙ্গল কমিউনিকেশন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের বেক্সিমকো এটি আপারেট করা শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, ডিটিএচের জন্যও কোয়াবের মতো সুনির্দিষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন। তা না হলে এ ডিটিএইচের যথেচ্ছা ব্যবহার করবে। এদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এএইচকে