News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৯ জানুয়ারি ২০২০
আপডেট: ০২:০৪, ১ মার্চ ২০২০

বনের ভেতর কাঠকয়লা তৈরির কারখানা

বনের ভেতর কাঠকয়লা তৈরির কারখানা

মির্জাপুরে সরকারি বনাঞ্চলের ভেতরে কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ কয়লা তৈরির চুল্লি (কারখানা) ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বন বিভাগ। এ সময় বিপুল পরিমাণ গ্রামীণ জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের গায়রা বেতিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ এ কয়লার চুল্লি ধ্বংস এবং বিপুল পরিমাণ গ্রামীণ জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয় বলে বুধবার বিট কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন জানিয়েছেন।

বাঁশতৈল সদর রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার রহমান জানান, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর ও খাটিয়ারহাটসহ বেশ কিছু এলাকায় বনের ভিতরে আশপাশে অবৈধভাবে চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে আসছে। এতে করে বনজসম্পদ ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং আশপাশের গ্রামের গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পরেছে। গোপন সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের বন বিভাগের সহকারী বন রক্ষক মো. জামাল হোসেন তালুকদারের নের্তৃত্বে গায়রা বেতিল এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির ৮টি চুল্লি ধ্বংস এবং বিপুল পরিমান গ্রামীণ জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে চুল্লি তৈরি ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি পালিয়ে যায়। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার ও মামলা করা যায়। তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে বাঁশতৈল সদর অফিসের বিট কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন জানান, সরকারি গজারি বনের গাছ চুরি ঠেকাতে বন বিভাগ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে অভিযানের সময় চোরাই পথে আসা বন বিভাগের গজারি গাছসহ বিপুল পরিমাণ চোরাই কাঠভর্তি দুটি ট্রাক আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বনের ভিতরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা করাতকল ও যন্ত্রপাতি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার কাঠ চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলার গোড়াই-সখীপুর রোডের বাঁশতৈল ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠসহ ট্রাক আটক ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার কাঠ চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার কাঠ চোররা হচ্ছে সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের হবি মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫), কালিদাস গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে কামরুল ইসলাম (২০), তক্তারচালা এলাকার পারজাগ গ্রামের শাহ আলমের ছেলে সাগর মিয়া (১৯) এবং ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ইব্রাহিম (৪০)।

হাটুভাঙ্গা অফিসের বিট কর্মকর্তা জানান, মির্জাপুরে ১৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর সরকারি বনভূমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভূমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমনি, পিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ রয়েছে। এছাড়া সমাজিক বনায়ন কর্মসুচির আওতায় প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। এলাকার উপকারভোগীদের মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকার কিছু সংঘবদ্ধ কাঠ চোর বিভিন্ন সময় রাতের আঁধারে বিভিন্ন কৌশলে গাছ চুরির চেষ্টা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠে।

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে বনজসম্পদ রক্ষার জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। বাঁশতৈল রেঞ্জ অফিসের অধিনে পাথরঘাটা, কুড়িপাড়া, হাটুভাঙ্গা, বংশীনগরসহ বিভিন্ন বিট অফিসের বিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ গজারি চোরাই কাঠ উদ্ধার ও বনাঞ্চলের ভিতরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা করাত কল উচ্ছেদসহ কাঠ চিড়াইয়ের সরঞ্জাম উদ্ধার করে বেশ কিছু মামলা দেয়া হয়েছে। বন আইনে মামলার পর তাদের টাঙ্গাইল বন আদালতে হাজির করলে বিচারক তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বন রক্ষার জন্য তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে ঐ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইলের বন বিভাগের সহকারী বন রক্ষক মো. জামাল হোসেন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস এবং গ্রামীন জালানিসহ বিপুল পরিমাণ কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে বনের ভিতরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা করাতকল উচ্ছেদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে কাঠ চোরদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চোরাই পথে আসা গজারি কাঠসহ দুইটি ট্রাক আটক এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করে বন আইনে মামলার পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সরকারি বনজসম্পদ রক্ষার জন্য তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়