কমলায় বিপ্লব: স্কুল প্রতিষ্ঠা করে পদ্মশ্রী বিজয়
হরেকালা হাজাব্বা, একজন কমলা বিক্রেতার গল্প

ভারতীয় নাগরিক হরেকালা হাজাব্বা। বয়স ৬৮। পেশায় কমলা বিক্রেতা। তবে এর বাহিরেও তার একটি পরিচয় আছে। তিনি শুধু একজন সাধারণ কমলা বিক্রেতা নন; ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘পদ্মশ্রী’ বিজয়ী। ২০২০ সালের ‘পদ্মশ্রী’র জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পদ্মশ্রী পদকের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম আছে হাজাব্বার। ভারতীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা পারভিন কাসওয়ানের এক টুইট থেকে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার খবরটি যখন হাজাব্বাকে জানানো হয়, তিনি তখন রেশন সংগ্রহ করার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন!
হাজাব্বার পদ্মশ্রী পাওয়ার পেছনের গল্পটা ভীষণ অনুপ্রেরণাদায়ী। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের যে গ্রামে হাজাব্বার বসবাস, সেই নিউপাদাপু গ্রামে ২০ বছর আগেও ছিল না কোনো স্কুল। হাজাব্বাই সর্বপ্রথম গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। শুধু অনুভব করেই ক্ষান্ত থাকেননি, নিজের জমানো অর্থ দিয়ে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি স্কুল। আস্তে আস্তে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, বড় হতে থাকে হাজাব্বার উদ্যোগও। নিজের জমানো অর্থে না কুলানোয় ধার নিয়ে স্কুলের জন্য একখণ্ড জমিও কিনে ফেলেন তিনি। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি, বানিয়েছেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও। অথচ হাজাব্বার দৈনিক গড় আয় মাত্র ১৫০ রুপি!
তার এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে হাজাব্বা উল্লেখ করেছেন বিদেশি এক দম্পতি পর্যটকের কথা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ মিনিটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজাব্বা বলেছেন, ‘বিদেশি এক দম্পতি আমার কাছে কমলার দাম জানতে চাইছিল। কিন্তু আমি ওদের কথা বুঝতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করেও তুলু ও বিয়ারি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আমি কথা বলতে পারছিলাম না। ওই দম্পতি তখন কমলা না কিনেই চলে গেল। পুরো ঘটনাটি আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল। তখনই আমি অনুভব করি, আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কিন্তু আমার গ্রামের ছেলেমেয়েদের যেন আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।’
রাষ্ট্রীয় সম্মাননার জন্য মনোনীত হওয়ার পর হাজাব্বা একটাই দাবি, সরকার যেন তার গ্রামে একটি কলেজ করে দেয়।
হাজাব্বার পদ্মশ্রী জয়ের এই কাহিনি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। টুইটারে অনেকেই তাকে বাস্তব জীবনের নায়ক বলে অভিহিত করেছেন। তাকে পদ্মশ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস