News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২০
আপডেট: ২০:২৩, ২২ জুন ২০২০

করোনাভাইরাস: সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক কতটা কার্যকর

বিশেষজ্ঞদের মতামত

করোনাভাইরাস: সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক কতটা কার্যকর

বায়ুবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যেকোনো খবরের জন্য একটি দারুণ প্রতীকী ছবি হল মাস্ক পরা কোনো মানুষের মুখচ্ছবি। বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা মাস্ক ব্যবহার। বিশেষ করে চীনে, যেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা শুরু হয়েছে।

অবশ্য বায়ুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয়ে আছেন ভাইরোলজিস্ট বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। তবে হাত থেকে মুখে সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ার কিছু নজির আছে।

আঠারো শতকে প্রথম সার্জিক্যাল মাস্কের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু ১৯১৯ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি আকার ধারণ করার আগ পর্যন্ত এই মাস্ক আমজনতার হাতে এসে পৌঁছায়নি। ওই মহামারিতে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ড. ডেভিড ক্যারিংটন জানান, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ভাইরাসই বায়ুবাহিত এবং এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ভালোভাবে ফিল্টার করতে পারেনা। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চোখও উন্মুক্ত থাকছে।

তবে হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে মাস্ক। আর হাত থেকে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কিছু সুরক্ষা দেয় এটি।

২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি সমীক্ষায় বলা হয়, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৩ বার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করে।

ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিক্যুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, হাসপাতালের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় দেখা গেছে রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে পারে।

রেসপিরেটর হচ্ছে এমন এক ধরনের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র যার মধ্যে একটি বিশেষায়িত ফিল্টার থাকে। মূলত বায়ুবাহিত ক্ষতিকর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থের হাত থেকে শ্বাসনালীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য রেসপিরেটর তৈরি করা হয়।

অধ্যাপক জোনাথন বলেন, সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সমীক্ষা চালালে যে তথ্য পাওয়া যাবে, সেটা একইরকম হবে না, কারণ দীর্ঘসময় ধরে টানা একটি মাস্ক পরে থাকা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব বেলফাস্টের ওয়েলকাম-উল্ফসন ইনস্টিটিউট ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের ড. কনর বামফোর্ড বলেন, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেই ছোঁয়াচে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কার্যকরভাবে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, যখন হাঁচি দিচ্ছেন তখন মুখটি ঢাকুন, তারপর হাতটি ধুয়ে নিন এবং ধোয়ার আগ পর্যন্ত মুখের ভেতরে হাত না দিন। শুধুমাত্র এতেই নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড- এর ড. জেক ডানিং বলেন, যদিও একটি ধারণা আছে যে মাস্ক ব্যাবহার করা উপকারি, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপকভিত্তিক উপকার পাওয়ার খুব কম নজিরই আছে।

তিনি আরও বলেন, মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতে হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবে নিয়মিত এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানতে হবে।

ড. জেক ডানিং বলেন, মানুষ যদি সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে, তবে তারা ব্যক্তিগত ও হাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিলেই ভালো করবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়