স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাণ্ডারী হচ্ছেন কারা?

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে। তার আগেই ঢেলে সাজানো হবে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনকে। আগামীতে পরিচ্ছন্ন, সৎ, ত্যাগী, সুসময়ে দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতাদের হাতেই উঠবে নেতৃত্ব। কেন না দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এসব সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অনেকে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে ত্যাগী মেধাবী নেতৃত্ব আসছে না। এর প্রভাব পড়ছে মূল দলেও।
অতীতে দেখা গেছে, সহযোগী সংগঠনের সফল নেতৃত্ব মূল দলে ঠাঁই পেয়েছে এবং এক সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্বও তাদের কাঁধে বর্তায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন পরিচ্ছন্ন সৎ, ত্যাগী তরুণরা আগামীর নেতৃত্বে আসুক। তারাই দলের হাল ধরুক। এই প্রত্যয় নিয়ে তিনি সব সহযোগী সংগঠন সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য সৎ এবং যোগ্য নেতা বাছাই করবেন তারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত এই চার নেতার মধ্যে রয়েছেন দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
যুবলীগের জন্য সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজতে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানককে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব অনুসন্ধানের বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি। এই দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। এ কারণে এই দুই সংগঠনের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচনে সততা, যোগ্যতা, স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তির প্রসঙ্গ বিশেষভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে।
দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় এরইমধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। বাদ পড়েছেন অনেক বাঘা বাঘা নেতা। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এবারে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে যারা আসবে তারা অবশ্যই সৎ হবে। নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দলের ভাবমূর্তি মানুষের কাছে আরও উজ্জ্বল হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৬ নভেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন ঘিরে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির আহ্বায়ক বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আর সদস্য সচিব বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু।
এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে যে নতুন কেউ আসছে সেটা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটে যারা এগিয়ে থাকবেন তারাই আসবে আগামী নেতৃত্ব।
আগামীতে যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসবেন তাদের মধ্যে আলোচনায় শীর্ষে আছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। তাকে সভাপতি পদে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কেন না তিনি এরই মধ্যে শীর্ষ মহলের গুড বুকে রয়েছেন। নির্মল রঞ্জন গুহ স্কুল জীবনে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে কলেজ, জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে
জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে গড়া সেবা শান্তি প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা জেলার আহব্বায়ক, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও পরবর্তী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগে দায়িত্ব পালনকালে খালেদা-নিজামী জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে একাধিক বার জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন এই নেতা।
এছাড়া সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন আফজালুর রহমান বাবু। তিনি বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি। এছাড়া আলোচনায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মঈন উদ্দীন মঈন। মঈন উদ্দীন মঈন একই সাথে বি. বাড়ীয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মেসবাউল হোসেন সাচ্চু। যিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনিও উচ্চ মহলের গুড বুকে রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুবারের সহ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১/১১ তে জননেত্রী মুক্তি আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক, বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের দুবারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেণ। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর বার বার গ্রেপ্তার ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দীর্ঘদিন ধরে কারাবরণ এবং অসংখ্য মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিলেন।
বর্তমান সদস্য সচিব ও বারবার কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সারা দেশের নেতা-কর্মীদের সাথেও রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।
আলোচনায় আরও রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন এ কে এম আজিম। যিনি বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। আলোচনায় রয়েছেন খায়রুল হাসান জুয়েল, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা (সাংগঠনিক সম্পাদক), শেখ সোহেল রানা টিপু (সাংগঠনিক সম্পাদক), রফিকুল ইসলাম বিটু (সহ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক)।
তবে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি এবং সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সম্মেলন পর্যন্ত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার বার্তা প্রদান করা হয়েছে। এই দুজনের কার বিরুদ্ধেই কোন প্রকার দূর্ণিতির অভিযোগ নেই। নিবেদিত প্রাণ, ত্যাগী নেতা হিসেবে দুজনই পরিচিত।
কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসন্ন কাউন্সিল সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা সৎ যোগ্য পরিচ্ছন্ন নেতা চাই। যারা ত্যাগী দলে দীর্ঘ দিন সময় দিয়েছে যাদের বিরুদ্ধে কোনো অসততার অভিযোগ নেই এমন লোকই হবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। এখানে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকার কোনো সুযোগ নেই। যারা কোনো দিন এই দল করেনি তাদেরও কোনো পদে থাকার সুযোগ থাকবে না।”
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন সম্পর্কে প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, “যারা রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার দুর্নীতির অভিযোগ নেই তারা নেতৃত্বে আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্ত হবে, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ