প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউড ফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান।
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশনস ইন বাংলাদেশ’শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি তার বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন।
ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউড ফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরণের অর্থায়নে কিছু ঝুঁকি এবং সমস্যা রয়েছে। এমনকি ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল বিষয় বিশ্বস্ততা। যা খুব সহজে অর্জন করা সহজ নয়। এখনও এ বিষয়ে কোন রেগুলেশন তৈরি করা হয়নি। তবে এখনই উপযুক্ত সময় ক্রাউড ফান্ডিং বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে ক্রাউড ফান্ডিং ব্যাংক ফান্ডের একটি উৎস হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। উন্নত দেশগুলো অনেক দক্ষতার সাথে এই উৎসটি ব্যবহার করে বহুপ্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা সফলতার সাথে তৈরি করেছেন। এমনকি বাংলাদেশেও কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যায়ন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আছে অপার সম্ভাবনা। ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কিত কোন নীতিমালা নেই তথাপি ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাংকের আস্থা এবং গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মতো নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
তিনি অরও বলেন, বাংলাদেশে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে। তবে সাবধান থাকতে হবে অপব্যবহার যাতে না হয়। এজন্য সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ক্রাউড ফান্ডিং একটি ভালো উদ্যোগ তবে কেউ অপব্যবহারের সুযোগ না পায় সে বিষয়টি নজর রাখতে হবে। আইন করে শুধুমাত্র অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ রাখতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অনানুষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ক্রাউড ফান্ডিং একটি পুরাতন অর্থায়ন ব্যবস্থা। আহছানিয়া মিশন এবং কিডনী ফাউন্ডেশনের বড় উদাহরণ। কিন্তু এটি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। চার সদস্যের একটি গবেষণা দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত, বিআইবিএমের প্রভাষক রাহাত বানু এবং জাপানের দশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বিঞ্চু কুমার অধিকারী।