মিয়া তানসেন
সুরের জাদুতে জ্বলত আগুন নামত বৃষ্টিধারা
ইতিহাসে এমন সঙ্গীত সাধক আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্য কারো সঙ্গীত নিয়ে এত রোমাঞ্চকর গল্পও আর জানে না কেউ। সঙ্গীত দিয়ে বৃক্ষ ও পাথরকে আন্দোলিত করা কিংবা বাতি জ্বালানোর গল্প আছে তাকে নিয়ে। এমনও কথা প্রচলিত আছে যে তিনি গান গেয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামাতে পারতেন, আগুন ধরাতে পারতেন সুরের শক্তিতে। এমন ছিল যার সঙ্গীতের মহিমা, তিনি সুর সম্রাট মিয়া তানসেন। শুধু গল্প নয় বরং বাস্তবেও বিশ্ববাসী আজ যে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে পরিচিত তার মূল স্রষ্টা হলেন এই তানসেন।
সঙ্গীত বিশেষজ্ঞের মতে ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ তিনি। তিনি ছিলেন মুঘল বাদশাহ আকবরের সভাগায়ক, ছিলেন ইতিহাসের বহুল আলোচিত মুঘল রাজদরবারের নবরত্নের অন্যতম।
আনুমানিক ১৫০৬ সালে ভারতের গোয়ালিয়রে এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই সঙ্গীত জাদুকর। ছোটবেলায় নাম ছিল তনু মিস্ত্র, কেউ কেউ বলেন রামতনু মিস্ত্র। ছোট থেকেই তানসেন সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। তার গুরু ছিলেন বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মেধা দেখে স্বামীজি বিস্মিত হন এবং তার বাবাকে বলে নিজের সাথে বৃন্দাবন নিয়ে যান। পরবর্তীতে বৃন্দাবন থেকেই তানসেন বিখ্যাত পণ্ডিত শিল্পীতে পরিণত হন।
বৃন্দাবন থেকে বিহাটে ফিরে শিব মন্দিরে তিনি তার সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন। শোনা যায়, তার সঙ্গীতে মন্দিরের দেয়াল আন্দোলিত হতো। স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তানসনের সঙ্গীতের কারণেই মন্দিরটি এক দিকে একটু হেলে পড়েছে। এর পর থেকেই তানসেনের সঙ্গীতের সাথে ‘অলৌকিক’ শব্দটা জুড়ে যায়।
বিহাটে সঙ্গীত চর্চা শেষে তানসেন হযরত গাউসের নিকট আসেন। হযরত গাউস ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ এবং তানসেনের আধ্যাত্মিক গুরু। অনেকের মতে তানসেন তার কাছেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তবে তানসেন আসলেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না তা নিয়ে ইতিহাসে নানা বিতর্ক রয়েছে।
হযরত গাউসের কাছে শিক্ষা শেষে তিনি মেওয়া বান্ধবগড়ের রাজা রামচন্দ্রের রাজকীয় আদালতে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। তারপর মুঘল বাদশাহ আকবর তার সঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে তাকে রাজ দরবারে নবরত্নের একজন হিসেবে সঙ্গীত সাধনা শুরু করার সুযোগ দেন। দুজন স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রাজ দরবারেই ছিলেন।
আনুমানিক ১৫৮৯ সালের ৬ মে আজকের এই দিনেই পরলোক গমন করেন মিয়া তানসেন। গোয়ালিয়রের মহান সুফি সাধক শেখ মুহাম্মদ গাউসের সমাধিক্ষেত্রেই মিয়া তানসেনের সমাধি রচিত হয়েছিল। এখনও এই সমাধি অনেক সঙ্গীত সাধকের কাছে পূজনীয় পবিত্র স্থান।
নিউজবাংলাদেশ/আরবিএস/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম