দুই যুগ ধরে দফায় দফায় ভাঙছে ইসলামী ঐক্যজোট
ঢাকা: প্রতিষ্ঠার পরেই ভাঙন শুরু। দফায় দফায় এ ভাঙন চলছে গত দুইযুগ ধরে। ছয়টি দল নিয়ে জোটবদ্ধ হওয়া ইসলামী ঐক্যজোটে শরিক দলের সংখ্যা কমে এসেছে অর্ধেকে। বিএনপির সঙ্গে যোগ দেয়া না দেয়াসহ একাধিক ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে বাকি দলগুলো বেরিয়ে গেছে জোট থেকে। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন একাধিক ঐক্যজোট। তবে মূল ঐক্যজোট গঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউই। উল্টো স্পষ্ট হয়েছে বিভাজন ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। জোট হওয়া সত্বেও নির্বাচন কমিশনে ‘একটি রাজনৈতিক দল’ হিসেবে নিবন্ধন নিয়েও তৈরি হয়েছে ‘হাস্যকর’ পরিস্থিতি। সবমিলিয়ে ভাঙতে ভাঙতে ঐক্যজোটের অবস্থা এখন ‘নাজুক’।
৯০ দশকে ছয় দল নিয়ে যাত্রা
ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করা হয় ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর। ৯১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত এ জোট গঠন করা হয়। জোটের উদ্দেশ্য ছিলো- ইসলামীদলগুলোকে একত্রিত করে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করা। সে সময়ে ছয়টি ইসলামি দল নিয়ে গঠন করা এ জোট। দলগুলো হচ্ছে- খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ফরায়েজী আন্দোলন। জোট গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করিম, মাওলানা আবদুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মান্ডুলি, মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ও মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট মিনার প্রতীকে নির্বাচন করে সিলেটের একটি আসনে বিজয়ী হয় ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল হক। তিনি ছিলেন শরিক দল খেলাফত মজলিসের নেতা। সংসদে একটি আসন অর্জন ছাড়া সে সময়ে আর কোনো অর্জন নেই ঐক্যজোটের।
দ্বন্দ্ব শুরু ক্ষমতা নিয়ে
ইসলামী ঐক্যজোটে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা নিয়ে। ৯৬ এর নির্বাচনের আগে সংসদে জোটের একমাত্র প্রতিনিধি মাওলানা ওবায়দুল হককে তার সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করানোর সিদ্ধান্ত নেয় জোটের শরিকদল। কিন্তু মজলিস এককভাবে এ পদত্যাগের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তখনই মূলত ঐক্যজোটে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে যায় শায়খুল হাদিসের দল খেলাফত মজলিস। তবে কিছুদিন পরে আবারও যোগ দেয় জোটে। শায়খুল হাদিস ও খেলাফত মজলিস বের হয়ে যাওয়ার পর ওইসময় ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিম। তখন মহাসচিব ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী।
সংসদের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ঐক্যজোটে প্রথম ভাঙন হয় বলে জানান জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। নিউজবাংলাদেশকে তিনি বলেন, “আমরা সবাই পদত্যাগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু শায়খুল হাদিস সাহেব এ সিদ্ধান্ত মানেননি। এরপরেই তিনি জোট থেকে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য আবার যোগ দেন।”
যোগ দিয়েই আমিনী মহাসচিব
১৯৯৭ সালে ঐক্যজোটে ইসলামী মোর্চা নিয়ে যোগ দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। জোটে যোগ দিয়েই তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব নেন। জোট প্রধানের দায়িত্বে তখন ছিলেন শায়খুল হাদিস আজিজুল হক। সে সময়ে ফতোয়া বিরোধী আন্দোলনসহ কয়েকটি বড় বড় সমাবেশ ও আন্দোলন করে রাজপথে সরব ছিলো এ জোট। তবে যোগ দেয়ার সঙ্গে আমিনীর মহাসচিব হওয়ার বিষয়টি শরিক কয়েকটি দল মানতে পারেনি। এ পদের প্রতি শরিক দলের আরও কয়েকজন নেতার আগ্রহ ছিলো বলে তৎকালীন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। তবে তার একবছর পরে মূলত জোটে ভাঙন শুরু হয়।
চারদলীয় জোটে যোগদান, বেরিয়ে গেলো শাসনতন্ত্র
আমিনী মহাসচিব হওয়ার পরের বছর ৯৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বে গঠন হয় চারদলীয় জোট। সে জোটের অন্যতম শরিকদল হয় ইসলামী ঐক্যজোট। চারদলীয় জোটে ঐক্যজোটের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে শরিকদলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। বিশেষ করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন শুরু থেকেই চারদলীয় জোটে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়।
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক ও মুফতি আমিনীর নেতৃত্বে সে বছরই ইসলামী ঐক্যজোট আট দফা দাবি নিয়ে চারদলীয় জোটে নাম লেখায়। এ ঘটনায় জোট ছাড়ে অন্যতম প্রধান দল ইসলামী শাসনতন্ত্র। তাদের দাবি, জোটের যে কোনো সিদ্ধান্ত শরিক সবগুলো দলের মতামতের ভিত্তিতে হবে। শায়খুল হাদিস ও আমিনী ক্ষমতার লোভে তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নারী নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে।
তবে জোট নেতারা এমন কথা অস্বীকার করে একাধিকবার জানান, সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই চারদলীয় জোটে সম্পৃক্ত হয়েছে ঐক্যজোট। আলোচনা ছাড়া কিছুই হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, “আসলে তখনকার পরিস্থিতিতে আলোচনার খুব একটা সুযোগ ছিলো না। আমি নিজেও চারদলীয় জোটে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলাম। পরে শুনি যে, ঐক্যজোট যোগ দিয়েছে। আমরাও যোগ দিলাম। তবে শাসনতন্ত্র যোগ দেয়নি। তারা জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়।”
ঐক্যজোটে দুইভাগ
২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে ঐক্যজোটও চারটি আসন লাভ করে। মোট সাতটি আসনে প্রার্থী দেয় ঐক্যজোট। তিনটি আসনেই ঐক্যজোট প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সে বছর উপ নির্বাচনে দুটিসহ মোট চারটি আসন লাভ করে ঐক্যজোট। জোট মহাসচিব মুফতি আমিনীও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
তারপরেই শুরু হয় বিপত্তি। মন্ত্রীসভায় থাকা না থাকা নিয়ে ঐক্যজোটের ভেতরে আধিপত্যের লড়াই বাঁধে। একদিকে অবস্থান নেয় জোটের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হক, অন্যদিকে মহাসচিব আমিনী। এরমধ্যেই শায়খুল হাদিসকে বাদ দিয়ে মুফতি আমিনী নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নতুন ঐক্যজোট গঠন করে। মহাসচিব হিসেবে তিনি নেন নেজামী ইসলামী পার্টির নির্বাহী সভাপতি মুফতি ইজহারকে। অপরদিকে শায়খুল হাদিসও বসে নেই। আমিনীকে বহিস্কার করে নিজে চেয়ারম্যান থেকে এ আর এম আব্দুল মতিকে মহাসচিব বানান।
এর মধ্য দিয়েই প্রথম দুইভাবে বিভক্ত হয় ঐক্যজোট। তবে জোটের পাঁচটি শরিক দলের মধ্যে চারটিই আমিনীর সঙ্গে থেকে যায়। শায়খুল হাদিসের সঙ্গে তার দল খেলাফত মজলিস ছাড়া আর কোনো দল ছিলো না। কিছুদিন পরে অবশ্য এ ঐক্যজোটের কাযক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
দুই মুফতির টানাপোড়েন, আরও একদফা ভাঙন
মুফতি আমিনীর নেতৃত্বে ঐক্যজোট তিনবছর ভালো সময়ই কাটাচ্ছিলো। বিপত্তি বাঁধে ২০০৪ সালে। সে বছর মুফতি আমিনী, ঐক্যজোট ও সরকারের একটি দল পাকিস্তান সফরে যায়। এদিকে বাংলাদেশে থেকে যান জোট মহাসচিব মুফতি ইজহার। জোট চেয়ারম্যানকে অবহিত না করেই তৎকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান। এ নিয়েই মুফতি আমিনীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে এসে জোটের বৈঠক ডাকেন মুফতি আমিনী। কিন্তু সে বৈঠকে উপস্থিত হননি মুফতি ইজহার। তবে তার দল নেজামে ইসলামী পার্টির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সেদিনের বৈঠকেই জোট নেতারা মহাসচিব পদ থেকে মুফতি ইজহারকে অব্যাহতি দিয়ে তার দলের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীকে জোটের মহাসচিব হিসেবে মনোনয়ন দেন। এ বিষয়ে নেজামী বলেন, “আমি মহাসচিব হতে চাইনি। আমাকে জোর করেই বানানো হয়েছে। তবে বৈঠকে উপস্থিত না থেকে মুফতি ইজহার সাহেব ভালো কাজ করেননি।”
এদিকে এ ঘটনার পরপরই নতুন ঐক্যজোটের ঘোষণা দেন মুফতি ইজহার। নিজে চেয়ারম্যান থেকে মিসবাহুর রহমান চৌধুরী নামে একজনকে মহাসচিব বানিয়ে তিনি এ জোট গঠন করেন। সেইসঙ্গে নেজামী ইসলামী পার্টি থেকে সরে গিয়ে নতুন নেজামে ইসলামী পার্টি গঠন করেন। তবে জোটের অন্য শরিক দলগুলোকে কাছে ভেড়াতে পারেননি মুফতি ইজহার।
ফের ভাঙন
নতুনভাবে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মুফতি ইজহার। নিজের বানানো মহাসচিব মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে দ্বিমত তৈরি হয়। রাজপথে কোনো কর্মসূচি ঘোষণার আগেই সে জোটে ভাঙন ধরে। ইজহার ও মিসবাহ দুই পথে হাঁটতে শুরু করেন। ২০০৫ সালের দিকে মিসবাহুর রহমান চৌধুরী নতুন জোটের ঘোষণা দেন। সে জোটে মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের জামাতা মাওলানা নুরুল ইসলাম খানকে মহাসচিব বানান।
এ ঘটনার পরপর মুফতি ইজহার হাফেজ জাকারিয়াকে নতুন মহাসচিব মনোনয়ন দেন। তবে এই দুই জোটের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। নাম থাকলেও ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে দুটি জোটই।
এদিকে কিছুদিন পরে মিসবাহুর রহমান চৌধুরী থেকে সরে গিয়ে তার মনোনীত মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি নামে নতুন একটি দল ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু চেয়ারম্যান ছিলেন আমিনী
২০০১ সালে শায়খুল হাদিসকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোটের এ পদে ছিলেন মুফতি আমিনী। একইসঙ্গে ২০০৪ সালের পরে মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর পদেও কোনো রদবদল হয়নি। ২০১২ সাল পযন্ত দীর্ঘ একযুগ এভাবেই চলে ঐক্যজোট। এরমধ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদল হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। চারদলীয় জোটের সঙ্গে থেকেই সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেয় মুফতি আমিনীর ঐক্যজোট।
২০১২ সালের ডিসেম্বর মুফতি আমিনী মারা যাওয়ার পরে জোটের কমিটিতে পরিবর্তন হয়। মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামীকে চেয়ারম্যান করে মুফতি ফয়জুল্লাহকে মহাসচিব হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাদের নেতৃত্বেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে জোটের কার্যক্রম।
জোট না দল?
ইসলামী ঐক্যজোট ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট হলেও নির্বাচন কমিশনে এটি নিবন্ধিত একটি দল হিসেবে। ২০০৮ সালে মুফতি আমিনী জীবিত থাকাকালীন ঐক্যজোট ইসিতে নিবন্ধিত হয়। এ ঘটনার পরে নিজেদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে জোট নেতাদের কাছ থেকে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বিষয়টি ‘হাস্যকর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের দাবি, নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জোটের শরিক বাকি তিন দলের কারোরই ইসিতে নিবন্ধন নেই। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঐক্যজোট নেতা বলেন, “এভাবে নিবন্ধন করে খুব একটা লাভ হয়নি। এখন এটা জোটও না, আবার দলও না।”
তবে সে বছরই নিবন্ধন নিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ, সর্বশেষ ভাঙন
৭ জানুয়ারি ইসলামী ঐক্যজোটের কাউন্সিলে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগের ঘোষণা দেয়। মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ পুনরায় চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের দায়িত্ব পান। সেদিনই ঐক্যজোটে সর্বশেষ ভাঙন ধরে। জোটের ভাইস চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে নিজেকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান দাবি করেন। পাশাপাশি ঐক্যজোট ২০ দল ছেড়ে যায়নি বলেও দাবি করেন।
কেমন করে তিনি চেয়ারম্যান হলেন?, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে রকিব বলেন, “লতিফ ও ফয়জুল্লাহ সংগঠনবিরোধী কাজ করেছে। এ সংগঠনে বহিষ্কারের নিয়ম নেই। তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ হয়ে গেছেন।”
এ বিষয়ে লতিফ নেজামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “তার (আবদুর রকিব) চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছা ছিলো। তাই তিনি নতুন জোট করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। অথচ আগের দিন আমাদের বৈঠকে ২০ দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষরও করেছেন।”
তবে আবদুর রকিবের গঠন করা জোটে আর কোনো দলকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। এ ঘটনায় নেজামী ইসলামী পার্টিতেও ভাঙন দেখা দিতে পারে।
নতুন জোটের গুঞ্জন
২০ দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে সবগুলো ইসলামী দল নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে নতুন করে জোট গঠনের গুঞ্জন ওঠেছে। বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারাও এমন গুঞ্জন শুনছেন বলে দাবি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। তবে এখনই কোনো জোট নয় বলে সব গুঞ্জন উড়িয়ে দেন জোট চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। তিনি বলেন, “আমরা এখন সংগঠনকে শক্তিশালী করবো। আপাতত আর জোটের ইচ্ছা নেই। নির্বাচন এলে তখন দেখা যাবে।”
কোনো কোনো ইসলামি নেতা দাবি করেন, ঐক্যজোটের নেতৃত্বে আর কোনো জোট হলেও সেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা আছে। দ্বন্দ্বে জড়িয়ে এতোবার যারা ভাঙনের মুখে পড়ে, তাদের নিয়ে নতুন জোটের মানে হয় না।
এ যাবত কতোবার ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙেছে- এমন প্রশ্ন দলের দ্বিতীয়দফায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান লতিফ নেজামীর কাছে করা হলে, তিনি হেসে বলেন, “ভাঙছে তো বহুবার। তবে টিকে আছি আমরাই। এটা টিকিয়ে রাখতে পারলেই যথেষ্ট।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম